এই সময় জ্বর হলে কী খাবেন

Reporter Name / ১৫ Time View
Update : বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫


বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল যেন একযোগে সংক্রামক জ্বরের মৌসুম। জলবায়ু পরিবর্তন, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মশাবাহিত রোগের বিস্তার এবং খাদ্য-জল দূষণ এই সময় নানা জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে।

বিশেষ করে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও সাধারণ ভাইরাল ফ্লু—এই জ্বর এ সময় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি রোগ প্রতিকারে পুষ্টিকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অনেক সময় অবহেলিত হয়।

চিকুনগুনিয়া জ্বর: প্রদাহ কমানো ও পুনরুদ্ধার

চিকুনগুনিয়া একটি আর্বোভাইরাল জ্বর যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, তীব্র অস্থি ও সন্ধির ব্যথা, ত্বকে র‍্যাশ, এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এর সাধারণ লক্ষণ। এই জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভে খাদ্য ও পুষ্টির যথাযথ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

তরল গ্রহণ: প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার তরল (খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লবণ-চিনি পানি, চিড়ার পানি, ঘরে তৈরি ফলের শরবত) শরীরের পানিশূন্যতা রোধে ও ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স রক্ষায় সহায়ক।

প্রদাহ নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান: আনারস ও পেঁপেতে থাকা ব্রোমেলেইন ও প্যাপেইন প্রাকৃতিক এনজাইম হিসেবে জয়েন্টের ব্যথা ও ফোলা কমায়। রসুন, হলুদ ও কালো গোলমরিচে থাকা অ্যালিসিন, কার্কিউমিন ও পাইপেরিন প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাইটোকাইন কমাতে সাহায্য করে।

প্রোটিন ও রোগ প্রতিরোধ: ডিম, সেদ্ধ মাছ ও মুরগির ঝোল কোষ ও টিস্যু মেরামতে এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি পেয়ারা, আমলকী, লেবু, কাঁচামরিচ, পেপে ও কমলায় থাকা ভিটামিন সি এবং বাদাম, সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন ই শরীরকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা দেয়।

টাইফয়েড জ্বর: অন্ত্রের যত্ন ও শক্তি পুনরুদ্ধার

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যার উৎস Salmonella Typhi। এটি অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে জ্বর, দুর্বলতা, খাওয়ার অরুচি ও দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।

সহজপাচ্য খাবার: ভাতের মাড়, সেদ্ধ ওটস, মিষ্টি আলু, সুজি, কলা ও পাতলা মুগ ডালের খিচুড়ি সহজে হজম হয় এবং শক্তি দেয়, অন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই।

নিম্ন ফাইবার ডায়েট: কাঁচা শাকসবজি, ছোলা, পেঁয়াজ সাময়িকভাবে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত, কারণ এগুলো অন্ত্রে গ্যাস সৃষ্টি করে প্রদাহ বাড়াতে পারে।

হালকা প্রোটিন: ডিমের সাদা অংশ ও ঝোল জাতীয় মাছ-মুরগি সহজে হজম হয় এবং শরীর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

হাইড্রেশন: বমি বা ডায়রিয়ার ফলে হারানো সোডিয়াম-পটাশিয়াম পূরণে ওর স্যালাইন গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

ভাইরাল ফ্লু ও সাধারণ জ্বর: ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখুন

ভাইরাল ফ্লু মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডেনো কিংবা করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। সাধারণত এটি জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা ও মাঝে মাঝে হালকা ডায়রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ইমিউন বুস্টার: ভিটামিন সি (পেয়ারা, লেবু), ভিটামিন এ (গাজর, পাকা আম, মিষ্টিকুমড়া), জিঙ্ক (ডিম, আমন্ড, কালোজিরা) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: সামুদ্রিক মাছ, চিয়া সিড, আখরোট ও ফ্ল্যাক্সসিড শরীরের কোষ ঝিল্লির সুস্থতায় এবং প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাকৃতিক উপাদান: মধু, আদা ও কালোজিরার মতো উপাদানে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে, যা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সাহায্য করে।

বর্ষা ও গ্রীষ্মকালীন জ্বর প্রতিরোধে শুধু ওষুধই যথেষ্ট নয়। সঠিক পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা এবং তরল গ্রহণ রোগ প্রতিরোধ ও আরোগ্য লাভের গতি অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্ষার সংক্রামক মৌসুমে সচেতনতা, পুষ্টির প্রতি যত্ন এবং ঘরোয়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই বিপুলসংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তেমনটাই বলছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/