বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির সিকদার। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগে এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাকে দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে সাব্বির ও তার মা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগী সাব্বির সিকদার জানান, তার বড় বোন শেবাচিমে সিজারের পর ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে পুনরায় ভর্তি করাতে আসেন। একই সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত মাকেও হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সকাল ৮টার দিকে তিনি মেডিসিন বিভাগের ১১০ নম্বর রুমে যান এবং প্রায় ১১২ জনের পেছনে দাঁড়ান। সকাল ১১টার দিকে সিরিয়ালে মাত্র ৫ জন বাকি থাকতে স্টাফরা জানান, মানববন্ধনের কারণে রোগী দেখা হবে না।
এর বিষয়ে আগেই জানানো হয়নি বলে আপত্তি তুললে এক পর্যায়ে তার সঙ্গে স্টাফদের তর্ক হয়। পরে তিনি ফেসবুকে লাইভে গেলে তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। মা ছাড়াতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মা-ছেলে মিলে এক ডাক্তারের রুমে আশ্রয় নিলেও সেখানেও মারধর করা হয়।
সাব্বির অভিযোগ করেন, ডাক্তাররা কেউ তাদের রক্ষা করেননি। বরং হাসপাতাল প্রশাসন এসে উল্টো তাকে ডাক্তারকে মারধরের অভিযোগে শাসন করেছে। পরে পুলিশ এসে মা-ছেলেকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগীর মা আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, “ওরা সবাই মিলে আমার ছেলেকে মারছিল। আমি বলছিলাম, আমার ছেলেকে মেরো না; এমনকি তাদের পা জড়িয়ে ধরেছি। তারপরও ওরা আমার ছেলেকে এমনভাবে মেরেছে যে রক্ত বের হয়ে গেছে। আমি পা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা না করলে হয়তো আমার ছেলেকে মারতেও পারত।”
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শেবাচিমের এক সেবাগ্রহীতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি দোতলায় ভর্তি আছি। একজন ডাক্তার সব রোগীকে বের করে দিয়ে প্রতিটি রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। বলছেন, কোনো রোগী দেখা হবে না। আমরা সাড়ে তিন হাজার স্টাফ, আজকে ওদের সঙ্গে বুঝে নেব। একজন মহিলা ডাক্তার এসব বলেছেন। স্টাফরা ডাক্তারদের নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রক্টরিয়াল টিম পাঠাই। আমাদের শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরারও অনুরোধ করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেবাচিমের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, “আমি শুনেছি আমাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেলের স্টাফ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও কিছু রোগীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষে দোষিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পুলিশি তদন্তও চলবে। আমরা চাই হাসপাতালের সেবা সুন্দরভাবে চালু থাকে; এজন্য সকলকে শান্ত থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।”
https://slotbet.online/