নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য রাখার বিষয়টি স্পষ্টভাবে যুক্ত করা হয়েছে। অনলাইনেও তাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। প্রস্তাব অনুমোদন হলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, আরপিও (সংশোধন) খসড়া অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি সংশোধনের খসড়া ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবে একক প্রার্থিতায় ‘না ভোট’, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল, জোটে থাকলেও নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ইভিএম-সংক্রান্ত ধারা বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, প্রায় ৪০-৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সমান ভোট হলে লটারি বাদ দিয়ে পুনর্নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিধান বাতিল, অনিয়ম হলে পুরো আসনে ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন, প্রার্থীদের হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচিত হলেও প্রার্থীতা বাতিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।
‘না ভোট’ বিধান
ইসি বলছে, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলেও ‘না ভোট’ হবে। আগে এ ধরনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতেন। এবার ‘না ভোট’-এ জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার
আরপিও সংশোধনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবও যুক্ত হয়েছে।
আরও কিছু প্রস্তাবিত সংশোধন
প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় অডিট আরও কঠোরভাবে করা হবে।
সংবাদকর্মীরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে পুরো সময় উপস্থিত থাকতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান নিতে পারবে, যা ব্যাংক লেনদেন ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
নির্বাচনকালীন সময়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে ডিআইজিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ বা স্থগিত হলে নিবন্ধনও স্থগিত হবে—এটা আরপিওতে স্পষ্টভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
বিলবোর্ডে শুধুমাত্র ডিজিটাল আলো ব্যবহার করা যাবে, অন্য আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রিজাইডিং অফিসারদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং ভোটে প্রভাব খাটালে কঠোর শাস্তির বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। অনেকের বিরুদ্ধে ফেরারি ঘোষণা জারি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসি ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য রাখার প্রস্তাব করেছে।
এর আগে সংস্কার কমিশন একই প্রস্তাব দিয়েছিল, যদিও তখন ইসি আপত্তি জানিয়েছিল। এবার তারা সেই প্রস্তাবই আরপিওতে যুক্ত করেছে।
সবশেষে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও সরকারের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে সংশোধনী কার্যকর হবে। আর আচরণবিধি অনুমোদনের পর গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি।
https://slotbet.online/