[ad_1]
দেশে সংঘর্ষ-সহিংসতার রাজনীতির যে চর্চা দেখা যায়, বিদেশের মাটিতেও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতি এভাবেই কেন চলছে—এই প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে প্রবাসীদের দলাদলি, এমনকি সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর নিউইয়র্কে ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্তার ঘটনায় সেখানে দেশি রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের আইনে ভৌগোলিক সীমানার বাইরে দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা বা কমিটি গঠনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বরং বিদেশে অব্যাহতভাবে চলছে দেশীয় রাজনীতির সমর্থনে দলাদলি ও নানা তৎপরতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার সাথে থাকা বা ব্যক্তিস্বার্থ বড় একটি বিষয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায় রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক নেতা দেশে এসে দলের মনোনয়নে সিলেটে মেয়র হয়েছিলেন। অনেকের এমপি হওয়ার গল্পও রয়েছে।
এখন আবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিএনপি সমর্থকরা দেশে ফিরছেন, অনেকে আছেন আসা-যাওয়ার মধ্যে।
যদিও কোনো রাজনৈতিক দলই বিদেশে দেশীয় রাজনীতির তৎপরতা বা দলাদলি সমর্থন করে না—এমন বক্তব্য দিচ্ছেন নেতারা।
কিন্তু তাদের কথা ও কাজের ফারাক লুকানো যাচ্ছে না।
দেশের বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধে কোনো দলের কার্যকর উদ্যোগ নেই; বরং তারা ফায়দা নিচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কয়েকজন দাবি করেছেন, অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিলেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতি করছেন।
কিন্তু সাধারণভাবে দেখলে ব্যক্তি ও দলের নেতাদের স্বার্থই সেখানে বড় বিষয় বলে মনে হয়। আর ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যে বড় লক্ষ্য থাকে দেশে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা।
লন্ডন ও নিউইয়র্কের প্রবাসী সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এর অনেক উদাহরণ দেশের মানুষও দেখেছে।

২০২৩ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে মেয়র নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিলেত থেকে এসে তার মেয়র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, প্রতিবাদও করেছিলেন। তবে তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব স্থানীয়দের সেই ক্ষোভ আমলে নেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্বের আশীর্বাদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন থেকে দেশে এসে সিলেটে দলটির মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শাসন পতনের পর তিনি দেশ ছেড়ে আবার লন্ডনে ফিরে যান।
লন্ডন থেকে আরেকজন দেশে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়েছিলেন—এ গল্প আরও চমকপ্রদ। জানা গেছে, তার লন্ডনে একটি কমিউনিটি হল আছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নানা অনুষ্ঠান আয়োজন হতো বিনা ভাড়ায়। এর প্রতিদান তিনি নিয়েছিলেন দেশে এসে এমপি হয়ে।
বিদেশে থাকা বিএনপির সমর্থকদের ক্ষেত্রেও অনেক উদাহরণ রয়েছে, নতুন উদাহরণও তৈরি হচ্ছে।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগ আমলে ১৭ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এজন্য যুক্তরাজ্যে বিএনপি সমর্থকদের তৎপরতা বেশি ছিল।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর লন্ডন থেকে বিএনপির অনেকে দেশে ফিরেছেন। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসকারী বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত অনেকেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তায় দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে।
লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক বুলবুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পেছনে নানা বাস্তবতা কাজ করে। কেউ বাংলাদেশে ক্ষমতার কাঠামোর কাছাকাছি থাকতে চান, কেউ আবার দেশে জমি রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা তদবিরের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন।”

নিউইয়র্কের সাংবাদিকরাও বলেছেন, বিদেশে থেকে দেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের একটা বড় অংশের কাছে দেশে সম্পদ ও ব্যবসা রক্ষা করাটাই বড় বিষয়।
প্রবাসীদের মতে, কোনো বড় দলের সাথে যুক্ত থাকলে দেশে সুবিধা পাওয়া সহজ হয়। কারণ মন্ত্রী-এমপিদের দেশে দেখা পাওয়া কঠিন হলেও তারা বিদেশে সফরে গেলে প্রবাসী সমর্থকদের সংবর্ধনা দেন, সময় দেন। এসব এক ধরনের বিনিয়োগ, যা পরে প্রতিদান আকারে ফিরে আসে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া অনেক বাংলাদেশি মূলধারার রাজনীতিতে জায়গা করতে না পারায় কমিউনিটিতে প্রভাব তৈরি ও দেশে সুবিধা পাওয়ার স্বার্থে দেশি রাজনীতিতে জড়ান।
আরেক দল আছেন যারা অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে দেশি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।
দলগুলোরও স্বার্থ আছে। অনেকে বিদেশ থেকে অর্থ বা ডোনেশন পান, যা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com