[ad_1]
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও নিয়ে দেশে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, সাধুর বেশে থাকা এক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে কয়েকজন যুবক ধরে জোর করে তার বহুদিনের জটাজটা চুল কেটে দেয়। ওই সময় অসহায় হয়ে তিনি আর্তনাদ করে বলেন— “আল্লাহ তুই দেহিস”।
ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০) ময়মনসিংহের তারাকান্দার কোদালিয়া কাশিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত থেকে জটা রেখেছিলেন। কৃষিকাজ ছেড়ে এখন তিনি নিভৃত আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করেন।
ঈদুল আজহার আগে কাশিগঞ্জ বাজারে “সামাজিক কাজের” নাম করে একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে এবং জোরপূর্বক চুল কেটে দেয়। স্থানীয়রা ঠেকাতে চাইলেও অভিযুক্তরা তা উপেক্ষা করে। এতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি হালিম উদ্দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
হালিম উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় তারা সামাজিকভাবে অপমানিত হয়েছেন এবং এখনও মানসিক কষ্টে আছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
স্থানীয় যুবক হাসিবুর রহমান জুয়েল জানিয়েছেন, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তার মতে, তিনজন বিশেষ পোশাকধারী ব্যক্তি চুল কাটার পাশাপাশি ভিডিও ধারণও করছিলেন।
ময়মনসিংহ বাউল সমিতি ও ময়মনসিংহ সংস্কৃতি সমাজ এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। সুফিবাদ ঐক্য পরিষদও এ ঘটনাকে অমানবিক উল্লেখ করেছে।
তদন্তে জানা যায়, ফেসবুকে “হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ” নামের একটি পেজ থেকে এ ধরনের কাজের ভিডিও নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে পেজটির সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে।
এছাড়া কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের মাহবুবুর রহমান নামে আরেকজন একই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তিনি “মাহবুব ক্রিয়েশন” ও “স্ট্রিট হিউম্যানিটি” নামে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে অসহায় মানুষের চুল-দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেওয়া হয়।
বাউল শিল্পী শফি মণ্ডল এ ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাধক বা বাউলদের জটাজটা তাদের সাধনার প্রতীক। জোর করে তা কেটে দেওয়া মানসিক নির্যাতন এবং মানবতার পরিপন্থী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের রক্ষা করা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নীরব থেকেছে। তার মতে, এটি সংবিধানবিরোধী এবং মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ঘটনাটিকে বেআইনি, অমানবিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী উল্লেখ করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
সমাজের বিভিন্ন মহল বলছে— মানুষের ব্যক্তিগত জীবনধারা, চুল বা দাড়ি রাখার স্বাধীনতা কারও হাতে জোর করে কেড়ে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com