[ad_1]
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের বাকি পাঁচ মাসেরও কম। জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতি চাইলেও রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী প্রচলিত পদ্ধতিতেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) পিআর নেই এবং আরপিও সামনে রেখেই কমিশনকে এগোতে হচ্ছে।
যদিও তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা একটা দলের মতো কথা কেন বলবেন?”
এখন ফেব্রুয়ারিতেই ভোট করতে হলে হাতে থাকা সময়ের মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে যাওয়ার বাস্তবতা আর আছে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। আর, এমন প্রেক্ষাপটে পিআর-এর দাবিতে মাঠে নামা দলগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াতে ইসলামী কী করবে?
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি মনে করেন, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে রয়েছে আইনগত, প্রশাসনিক ও জনসচেতনতার চ্যালেঞ্জ।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে লক্ষ্য, সেই সময়ের মধ্যে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য সময়ের প্রতিবন্ধকতা মানতে নারাজ।
“যদি রাজনৈতিক দলগুলো পিআর পদ্ধতির দাবিতে একমত হয়, তাহলে এটি বাস্তবায়ন করা ‘ম্যাটার অব ওয়ান মান্থ (এক মাসের ব্যাপার)”—বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন হয়, তাকে বলা হয় ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট বা এফপিটিপি। সর্বোচ্চ ভোট যেখানে একমাত্র নিয়ামক।
যুক্তরাজ্যের ইলেকশন রিফর্ম সোসাইটির তথ্য বলছে, ওয়েস্টমিনস্টার ধারার অনেক গণতান্ত্রিক দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। আবার অনেক দেশ এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আনুপাতিক পদ্ধতির দিকে ঝুঁকেছে।
বাংলাদেশে আগে থেকেই বিভিন্ন দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা বলে আসলেও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর এই দাবি জোরেশোরে উঠতে থাকে। বিশেষ করে, আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী সোচ্চার হয়।
অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে।
দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলি বলছিলেন, এমন বাস্তবতায় যদি এখন পিআর চালু করতেও হয়, বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
প্রথমত সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতে হবে। এই অনুচ্ছেদে সংসদ প্রতিষ্ঠার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
এরপর সেই সংশোধনের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
“আইনের আলোকে বিধিমালা তৈরি করতে হবে। আর এই বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল,” বলেন মিজ টুলি।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এফপিটিপি পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাঠ পর্যায়ে মানুষ এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত। তারা নিজের এলাকার প্রার্থীকে ভোট দেয়। পিআর পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার ধরন ভিন্ন, তাই জনগণকে নতুনভাবে বোঝাতে হবে।”
পিআর পদ্ধতির ধরন, প্রার্থী নির্বাচন, ভোট গণনা—সবকিছু ভোটারদের বোঝাতে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মসূচি।
জেসমিন টুলি বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন “কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
“সব মিলিয়ে যে সিস্টেমটা তৈরি করতে হবে সেটা বছর দেড়েকের আগে শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না,” যোগ করেন তিনি।
জামায়াতের দাবি আদায় কঠিন হয়ে যাচ্ছে?
ফেব্রুয়ারিতেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন এখনো অসম্ভব নয়, বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি জামায়াতসহ সাতটি দল বেশ কিছু দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে। দাবিগুলোর অন্যতম আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।
“আমরা আন্দোলন করছি, দাবি জানাচ্ছি, আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছি। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বোঝাচ্ছি যে, আমাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায্য,” বিবিসি বাংলাকে বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে আরপিওর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংবিধান, আরপিও সবই সংশোধনযোগ্য।”
সিইসির বক্তব্যকে “একপেশে” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“এগুলো কোনো একটা দলকে খুশি করার জন্য বলা,” বলছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
সময় যত গড়াচ্ছে পিআর-এর দাবি আদায় জামায়াতের জন্য আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে দ্বিমত জানান মি. পরওয়ার।
বলেন, “আন্দোলন চলবে, আলোচনাও চলবে। ঐকমত্য কমিশনের পথ রুদ্ধ হয়নি, সরকার চাইলে আমাদের আলোচনায় ডাকতে পারে।”
তার মতে, আন্দোলন, গোলটেবিল, পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে সংবাদ এবং লেখালেখির মাধ্যমে জনগণ সচেতন হচ্ছে।
“জাতি ম্যাচিওরড হচ্ছে, লার্নড হচ্ছে। এই আন্দোলন রাজনীতিরই অংশ,” যোগ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তার বক্তব্য থেকে ধারণা পাওয়া যায়, পিআর-এর পক্ষে জনসমর্থন তৈরির কৌশল হিসেবেও আন্দোলন কর্মসূচি জারি রাখতে চায় জামায়াত।
[ad_2]
https://slotbet.online/