[ad_1]
বাংলাদেশে পর্যটনকে সাধারণত তিন ভাগে দেখা হয়—বিদেশি বা ইনবাউন্ড, বিদেশগামী বা আউটবাউন্ড এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটন। আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশগামী পর্যটনের প্রবাহ যথেষ্ট হলেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। অথচ, এ খাত থেকেই আসে বৈদেশিক মুদ্রা, যা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে।
ইনবাউন্ড পর্যটন কম হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—এটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। সরকারি উদ্যোগ সাধারণত অভ্যন্তরীণ পর্যটনকেন্দ্রিক, বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা হয় না। এছাড়া আমাদের দেশের পর্যটনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের কোনো শক্তিশালী ব্র্যান্ডিংও তৈরি হয়নি। থাইল্যান্ডের Amazing Thailand, মালয়েশিয়ার Truly Asia বা ভারতের Incredible India—এর মতো কার্যকর প্রচারণা স্লোগান বাংলাদেশের নেই।
আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা ও রোড শোতে অংশগ্রহণ না করা। এ ধরনের আয়োজন বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের উপস্থিতি সেখানে খুবই সীমিত। ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের একার পক্ষে এসব মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় অসম্ভব, আবার সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।
এ ছাড়া অবকাঠামো ঘাটতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং দক্ষ গাইডের অভাবও বিদেশি পর্যটকের আগমন কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষত, ইউরোপীয় দেশ থেকে কেউ এলে ভাষাগত সমস্যার কারণে উপযুক্ত গাইড পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
অনেকে মনে করেন নিরাপত্তাহীনতা বিদেশি পর্যটন কমার অন্যতম কারণ। তবে বাস্তবে অনেক পর্যটকই সাহসী ভ্রমণপিপাসু—তারা নেপাল বা শ্রীলঙ্কার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা দেশেও যান। তাই আসল সমস্যাটি দেশের ভাবমূর্তি ও আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের সঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারা। আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কিংবা আতিথেয়তাপূর্ণ মানুষের গল্প বিশ্বমঞ্চে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি।
এছাড়া ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটররা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও তাদের জন্য প্রণোদনা, স্বীকৃতি বা জাতীয় পুরস্কারের মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই খাতকে উৎসাহিত করা হয়।
পর্যটনের বৈশ্বিক গুরুত্ব বিশাল—জিডিপির দিক থেকে এটি ১০.৯ শতাংশ অবদান রাখে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ব্যবসায়িক চুক্তি ও নতুন সহযোগিতা গড়ে ওঠে। সাধারণত এই মেলা দুই ধরণের—B2B (Business to Business) এবং B2C (Business to Consumer)। বাংলাদেশে ২০০২ সাল থেকে স্থানীয় পর্যটন মেলা হচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বর্তমানে দেশের ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটররা টিকে থাকার লড়াই করছে। আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ তাদের প্রধান গ্রাহক বিদেশিরা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্র থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবসে মূল প্রশ্ন দাঁড়ায়—সরকার কি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে নতুন করে চিন্তা করবে? পর্যটন খাতকে সত্যিকার অর্থে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে তুলতে কি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
লেখক: প্রধান নির্বাহী, জার্নিপ্লাস
ই-মেইল: taufiq@journeyplus.com
[ad_2]
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ আব্দুল লতিফ
প্রধান সম্পাদকঃ এম এস এন মাসুক হিমেল
সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ হাউজ ২৪, রোড ৩, মনিপুরি পাড়া, ফার্মগেট ঢাকা।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ ৭ মতি কমপ্লেক্স রোড চকবাজার চট্টগ্রাম
মোবাইলঃ ০১৯৯৪৪২২৭৮৯
ই-মেইলঃ news@dainikprovhatersangbad.com