শিরোনাম
স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন Save the nature of Bangladesh চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কমিটির পক্ষ থেকে মেয়র কে ফুলেল শুভেচ্ছা বিশ্ব অ্যানাস্থেসিয়া দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামে সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যৌথ উদ্যোগই পারে সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখতে: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সব ধর্মের মানুষের জন্য শান্তির শহর গড়তে চাই — মেয়র ডা. শাহাদাত ভেজাল বিরোধী অভিযান সদরঘাট রোডে দুই রেস্টুরেন্টকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা টাইফয়েড থেকে শিশুদের বাঁচাতে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন নিন: মেয়র ডা. শাহাদাত চন্দনাইশে শহীদ জিয়ার খাল খননের স্মৃতি বিজড়িত বৈঠকখানার উদ্বোধনকালে ডা. শাহাদাত হোসেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে এগিয়ে নিতে হবে –জসিম উদ্দিন চৌধুরী

আটষট্টি হাজার গ্রাম নয়, একটি গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে তার নাম চট্টগ্রাম

Reporter Name / ১৬ Time View
Update : সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

[ad_1]

বাঙালির প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ খ্রিস্টিয় অষ্টম শতাব্দিতে চট্টগ্রামেই স্থাপিত হয়। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়’র মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পণ্ডিত বিহারের অধ্যাপকগণ অধ্যয়ন, অধ্যাপনা এবং যোগ সাধনার পাশাপাশি অবসর অবকাশে যে সকল গান দোহা রচনা করেন তা হলো বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। এই গান ও দোহা নিয়ে যে গ্রন্থ সম্পাদিত হয় তার নাম ‘চর্যাপদ’।এটি বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ। চর্যাপদ রচনা করেন ২৪ জন কবি। তাদের ১৪ জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। তারা সাড়ে ছেচল্লিশটি কবিতা রচনা করেন। বাংলা ভাষার জন্ম যদি হয় ৯৫০ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি, তাহলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জন্ম আজ হতে দেড় হাজার বছর পূর্বে। অনেকটা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার গর্বে বাংলা ভাষার জন্য হয়।

গবেষকদের মতে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। কেউ বলেছেন এটি চট্টগ্রামের দেব পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। আবার কেউ বলেছেন, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা রঙ্গম হলে (বর্তমানে জেনারেল হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠিত ছিল। জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের সময় একটি বুদ্ধমূর্তিসহ বেশ কিছু বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, দেয়াং পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যে যা বলুক পণ্ডিত বিহার যে চট্টগ্রামের মাটিতেই প্রতিষ্ঠিত ছিল মোটামুটি এ বিষয়ে সবাই একমত।

এ বিষয়ে সঠিক তথ্যটি জানতে পারলে বাংলা ভাষার আধি উৎসের অনেক তথ্য পাওয়া যেতো। এটি বিলুপ্ত হওয়ার কারণ,সমগ্র দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অবিচারের সময় এটিও ধ্বংস করা হয়েছে কিনা জানা প্রয়োজন। (তথ্যসূত্র: সবুজ বড়ুয়া শুভ-এর লেখা, ‘অস্তিত্ব অন্বেষা: চর্যাপদের উৎসভূমি চট্টগ্রাম ও পণ্ডিত বিহার’ দ্র: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল)

মুসলিম পর্যটকের মধ্যে চট্টগ্রামে যিনি প্রথম ভ্রমণ করেন তিনি হলেন ইবনে বতুতা। তখন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী চট্টগ্রামেই ছিল। ১৩৪৬-৪৭ সালে মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা জানান, ‘বাংলাদেশের প্রথম যে শহরে আমরা প্রবেশ করি তার নাম ‘সোদকাওয়াং’ (চট্টগ্রাম)। এটি সাগরতীরবর্তী একটি বিরাট রাজধানী শহর।

ইবনে বতুতা তাঁর সফর কাহিনী ‘রিহলা’তে উল্লেখ করেছেন, সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের যত জাহাজ চট্টগ্রামে নোঙর করতো তার বেশির ভাগই চট্টগ্রামে নির্মিত হতো।বুঝাযায় চট্টগ্রামের জাহাজ শিল্পের খ্যাতি হাজার বছরের পূর্বের। তৎকালে চট্টগ্রামের জাহাজ শিল্প অনেক দেশ অনুসরণ করে নৌ যোগাযোগে বিপ্লব এনে ছিলো। তখন আমদানি রপ্তানির প্রাণকেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম। তখন চট্টগ্রামের নাম ইউরোপীদের মুখে মুখে ছিল। ভাস্কো দা গামা ভারতের জলপথ আবিস্কার করার পর ভারত মহাসাগরে ইউরোপের জাহাজের উপস্থিতি বৃদ্ধিপায়।ইউরোপের নাবিক চট্টগ্রামে অবতরণ করতে পছন্দ করতেন। ইতালির পর্যটক লুডোভিকো ভারথেমা চট্টগ্রামে এসেছিলেন ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে।

চট্টগ্রামকে তিনি লেখেন, ‘সিটি অব ব্যঙ্গেলা’। তিনি বলেছেন, যত নগর আমি দেখেছি কোনোটাই সিটি অব ব্যঙ্গেলার মত দেখে মুগ্ধ হইনি। ভারথেমার ভাষায় এত বেশি ধনী ব্যবসায়ী আমি অন্য কোন দেশে দেখিনি’। (সূত্র: ড. সালমা বিনতে শফিক-এর লেখা, পেন্টাপলিস, গঙ্গা, হরিকেল, চাটিগাঁও চট্টগ্রামের নামের ইতিবৃত্ত’ দ্র: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল, দৈনিক আজাদী)

তাবেয়ীর যুগ হতে কত শত আউলিয়া কেরাম চট্টগ্রামে আগমন ঘটেছে তার হিসেব আমাদের কারো নিকট নেই। বার আউলিয়ার মত প্রচুর আউলিয়া কেরাম বহুদেশ ঘুরে জীবনের শেষ সময়টা কাটাতে চট্টগ্রামকে বেচে নিয়েছেন এবং চট্টগ্রামের মাটিতে শেষ বারের মত শায়িত হতে ভালোবেসেছেন। তাই চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘মদিনাতুল আউলিয়া’ আউলিয়াদের শহর।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন। তিনি নবী আউলিয়াদের প্রেমিক ছিলেন। তিনি এক অলির মাজারের খাদেম ছিলেন। যে চুরুলিয়া গ্রামের আলো বাতাসে তিনি বড় হয়েছেন সে ‘চুরুলিয়া’ নাম এসেছে ‘চার আউলিয়া’ হতে। এই গ্রামে আল্লাহর চার আউলিয়া শায়িত আছেন। তাই এই গ্রামের নামকরণ হয় চুরুলিয়া। কবি যখন চট্টগ্রাম আসতেন তখন কেউ কেউ বলতেন চুরুলিয়া হতে বার আউলিয়ার দেশে কবির আগমন হয়েছে।

ঢাকার ইতিহাস মাত্র ৬ শত বছরের। চট্টগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহ্য ভাষা সংস্কৃতি কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীন কাল হতে চট্টগ্রাম বন্দর একটি দুনিয়ার সেরা প্রাকৃতিক বন্দর। এ ধরনের প্রাকৃতিক বন্দর দুনিয়ায় খুব কমই আছে। বৈদেশিক দখলদারের কুদৃষ্টি ছিল এই বন্দরের প্রতি। ১৭ ডিসেম্বর ১৬৮৯ সালে একটি ইংরেজ নৌ বহর চট্টগ্রামের অদূরে এসে হাজির হয় এবং এই বন্দর দখলের চেষ্টা করতে থাকে। ক্রিস্টফার কলম্বাস যিনি ভারতের সন্ধান করতে নেমে আমেরিকা আবিস্কার করেছিল। তদ্রুপ বৃটিশরাও চট্টগ্রাম দখল করতে ব‍্যর্থ হয়ে কলকাতায় তারা তাদের অধিকৃত রাষ্ট্রের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে।

এশিয়ার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্না সাহেবকে ইস্পাহানী গ্রুপ জানতে চেয়েছিলেন,আমরা করাচি বন্দরে না চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করবো? তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দর পৃথিবীর একটি প্রাকৃতিক বন্দর।চট্টগ্রাম বিনিয়োগের জন‍্য ভাল উপযোগী স্থান।

যুগে যুগে চট্টগ্রাম বন্দরকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হয়েছে। কালুরঘাট সেতু নির্মাণের পর বন্দরটি অনেকটা ভরাট হয়ে যায়। শাহ আমানত ব্রীজ নির্মাণের পর বন্দরটি আরো ভরাট হয়ে পড়ে। আমেরিকান কোম্পানি এসএসএ পোর্ট বন্দরের মোহনায় স্থাপনের মাধ্যমে বন্দর ধ্বংস করার চক্রান্ত শুরু করে। সরকার ও বিরোধী দলীয় সকল নেতা যখন চুপ তখন চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দর বাঁচাতে গর্জে উঠেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে থামাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হোলজম্যান চসিক মেয়র অফিসে উপস্থিত হয়ে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নিকট দশ মিলিয়ন ডলার ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দেন। দেশের স্বার্থে তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ঘুষের প্রস্তাবের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করে মার্কিন বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন বিরোধী অবস্থানকারী প্রথম সাহসী পুরুষের নাম মহিউদ্দিন চৌধুরী।তাঁর এই আন্দোলনের সাথে ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমিও জড়িত ছিলাম। ‘বন্দর বাঁচাও,দেশ বাঁচাও’ বইটি দেশব্যাপী প্রচার করার দায়িত্ব উনি আমাকে প্রদান করেছিলেন। এই আন্দোলনের সময় মার্কিন দালাল শ্রেণীর কিছু রাজনীতিক বলেছিলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী। এসএসএ পোর্ট প্রতিষ্ঠা হলে দেশের অনেক উন্নতি হবে অথচ মহিউদ্দিন চৌধুরী এসএসএ পোর্ট বিরোধী ছিলেন না, কর্ণফুরীর মোহনায় তাদের পোর্ট নির্মাণের বিরোধী ছিলেন, কারণ নদীর মোহনায় পোর্ট করলে চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে তিনি বন্দরের মোহনায় পোর্ট না করে অন্য কোন স্থানে এসএসএ পোর্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

তারা বলেন, অন্য কোন স্থান পোর্ট নির্মাণের উপযোগী নয়।তখন মহিউদ্দিন চৌধুরী তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনে মোবারকের ভাই পৃথিবীর একজন সেরা বন্দর বিশেষজ্ঞ ঈসমাইল মোবারকের মতামত এনে পত্রিকায় বড় বড় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে প্রমাণ করে দেন সন্দ্বীপ চ্যানেলে বন্দর করা সম্ভব। তখন চক্রান্তকারীরা চুপ হয়ে যায়। চট্টগ্রামের অধিকারের প্রশ্নে জননেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তখনো আপোস করেননি।তিনি ছিলেন আপোষহীন সংগ্রামী নেতা।তাই আমরা রাজপথে শ্লোগান তুলতাম ‘যখন আসে দুর্দিন, এগিয়ে আসে মহিউদ্দিন’। (দ্বিতীয় পর্ব)

লেখক: কলাম লেখক, রাজনীতিক

[ad_2]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/