[ad_1]
আসছে শীতকাল, আর শীতকালে ভ্রমণের আনন্দই যেন অন্যরকম। হালকা ঠান্ডা হাওয়া, খোলা আকাশ আর মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ানো দিনের মধ্যে প্রকৃতির ছোঁয়া নিতে চাইলে এই সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। আর শীতকালীন ভ্রমণের আদর্শ গন্তব্যগুলোর মধ্যে নিঝুম দ্বীপ নিঃসন্দেহে অন্যতম।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের কোলে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ, যার নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য, ম্যানগ্রোভ বন, হরিণের অবাধ বিচরণ এবং অতিথি পাখির কলকাকলি যে কাউকে মুগ্ধ করে। তাই প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য নিজ চোখে অবলোকন করতে চাইলে যেতে পারেন নিঝুম দ্বীপে।
বাসে ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ:
ঢাকার সায়দাবাদ থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত একুশে এক্সপ্রেস, মুনলাইন এন্টারপ্রাইজ ও হিমাচল এক্সপ্রেসের বাস চলাচল করে। ধানমন্ডির জিগাতলা কাউন্টার থেকেও রাত ১০টা ২০ মিনিটে একুশে পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। নন-এসি ও এসি কোচের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
সোনাপুর থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে চেয়ারম্যান ঘাটে পৌঁছাতে হয়, ভাড়া পড়ে প্রায় ৪৫০থেকে ৫০০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়াগামী সি-ট্রাক, ট্রলার এবং স্পিডবোট পাওয়া যায়। যার ভাড়া জনপ্রতি যথাক্রমে ৯০, ১২০ থেকে ১৫০ এবং ৪০০ টাকা।
হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে পৌঁছে মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মোক্তারিয়া ঘাট। দুইজনের জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া হয় প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সেখান থেকে ট্রলারে মাত্র ২২ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে। এরপর আবার মোটরসাইকেলে করে ১০০ টাকার মধ্যে নামার বাজারে পৌঁছানো যায়, যা দ্বীপের মূল কেন্দ্র।

সি-ট্রাক টাইমিং:
চেয়ারম্যান ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টায় সি-ট্রাক ছাড়ে এবং নলচিরা থেকে ফিরতি সি-ট্রাক সকাল ১০টায়।
ট্রেনে ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ:
কমলাপুর থেকে সপ্তাহে ৬ দিন (মঙ্গলবার ছাড়া) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে “উপকূল এক্সপ্রেস” ট্রেন ছাড়ে, যা নোয়াখালীর মাইজদি পৌঁছাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় নেয়। টিকিটের ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী ৩১৫ টাকা থেকে শুরু।
মাইজদি থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে সময় লাগে এবং রিজার্ভ ভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। লোকাল ভাড়া জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এরপর উপরের উল্লেখিত রুট ধরেই নিঝুম দ্বীপে পৌঁছাতে পারবেন।
লঞ্চে সদরঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে নিঝুম দ্বীপ:
প্রতিদিন বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে সদরঘাট থেকে হাতিয়ার তমুরদ্দি ঘাটে একটি মাত্র লঞ্চ ছাড়ে। এটি সকালে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে পৌঁছায়।
ডেক: ৩৫০ টাকা
সিঙ্গেল কেবিন: ১২০০ টাকা
ডাবল কেবিন: ২২০০ টাকা

তমুরদ্দি ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মোক্তারিয়া ঘাট, যেখানে দুইজনের ভাড়া প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মোক্তারিয়া থেকে ট্রলারে বন্দরটিলা ঘাট (ভাড়া ২২ টাকা), তারপর মোটরসাইকেলে নামার বাজার (১০০ টাকা দুইজনের)।
চাইলেই তমুরদ্দি ঘাট থেকে সরাসরি ফিশিং ট্রলারে নামার বাজারে যাওয়া যায়। এই ট্রলারগুলো প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, আর রিজার্ভ ট্রলারের খরচ পড়ে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত, ট্রলারের সাইজ অনুযায়ী।
চিত্রা হরিণের অভয়ারণ্য:
নিঝুম দ্বীপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এর চিত্রা হরিণ। দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কেওড়া বনের ভেতর দিয়ে হাঁটলে হরিণের চলাফেরা, লুকিয়ে থাকা বা হঠাৎ ছুটে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়বে। বিশেষ করে ভোর কিংবা সন্ধ্যার সময় হরিণ দল বেঁধে ঘাসের মাঠে ঘোরাফেরা করে। ধারণা করা হয়, দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটা এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা।

কেওড়া বন ও ম্যানগ্রোভ জলপথ:
নিঝুম দ্বীপ মূলত ম্যানগ্রোভ গাছের বনে ঘেরা। এখানকার কেওড়া বন অল্প পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ, তাদের উঁচু শ্বাসমূল আর ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে চলা ট্রলার যাত্রা, সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। জলপথে ঘুরে দেখতে দেখতে হরিণ, পাখি কিংবা ছোট ছোট জলজ প্রাণীর দেখা মিলে যেতে পারে।
অতিথি পাখির মিলনমেলা:
শীতকাল এলেই নিঝুম দ্বীপ পরিণত হয় পাখির স্বর্গে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত শত শত অতিথি পাখি এখানে আশ্রয় নেয়। কেওড়া বন, ফাঁকা মাঠ কিংবা জলাভূমির ধারে বসে দেখা যায় তাদের কলরব, দল বেঁধে ওড়া কিংবা পানিতে খেলা করার দৃশ্য। পাখিপ্রেমী বা আলোকচিত্রীদের জন্য এটা এক দুর্লভ সুযোগ।
নামার বাজার ও সী বিচ:
নিঝুম দ্বীপের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে নামার বাজার। ছোট ছোট দোকান, গেস্টহাউজ ও স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থানটি। এখান থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে দ্বীপের সী বিচ,যেখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য এক কথায় অপূর্ব। বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের ধারে গিয়ে বসলে দেখা যাবে, সূর্য ধীরে ধীরে দিগন্তের রেখা পেরিয়ে লাল-কমলা আভা ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে সাগরের জলে। চারপাশে নীরবতা, শুধু ঢেউয়ের শব্দ সবমিলিয়ে অনন্য এক অনুভূতি।

থাকার ব্যবস্থা ও খরচ:
নামার বাজারে এখন বেশ কিছু কটেজ ও গেস্টহাউজ গড়ে উঠেছে। জনপ্রতি ৫০০–১০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করা সম্ভব। খাবারের জন্য স্থানীয় হোটেলগুলোতে সি-ফুড, ভাত-তরকারি বা হরেক রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যায়।
ভ্রমণ পরামর্শ:
শীতে ভ্রমণ করলে হালকা গরম জামা সঙ্গে রাখুন। পরিবেশবান্ধবভাবে ঘুরুন, প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। ঘূর্ণিঝড় বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকলে যাত্রা স্থগিত করুন।
নিঝুম দ্বীপের মতো এতটা নির্জন, শান্ত এবং প্রকৃতিমগ্ন জায়গা বাংলাদেশে খুবই কম। শহরের ব্যস্ততা ভুলে, ডিজিটাল জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি পেতে নিঝুম দ্বীপ হতে পারে আপনার পরবর্তী শীতকালীন ভ্রমণের ঠিকানা।
শুধু দেখবেন না, প্রকৃতিকে মন দিয়ে অনুভব করবেন, কারণ নিঝুম দ্বীপ নিজেই একটা অনুভূতির নাম।
[ad_2]
https://slotbet.online/