শিরোনাম

এস আলমের দুই প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক, হিসাবও জব্দ

নিউজ ডেস্ক / ১২০ Time View
Update : বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের সুদসহ প্রায় সাত হাজার ৭১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। ফাঁকি দেওয়া টাকা উদ্ধারে প্রতিষ্ঠান দুটির বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) লক (স্থগিত) করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ (অপ্রচলনযোগ্য) করা হয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের অধীন পটিয়া ভ্যাট বিভাগ থেকে এরই মধ্যে দেশের ৫৭টি ব্যাংকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো— এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড।

বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এস আলমের প্রতিষ্ঠান দুটির বিআইএন লক ও ব্যাংক হিসাব জব্দে গতকাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, গ্রুপটির সহযোগী নয়টি প্রতিষ্ঠানের আরও এক হাজার ৪১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন ও দাবিনামা জারি করা হয়েছে বলেও একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে।

dhakapost

এনবিআর সূত্র বলছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাট রিটার্নে কম ক্রয়-বিক্রয় দেখানোসহ বিভিন্ন উপায়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কোম্পানি দুটি মোটা অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানি দুটি তিন হাজার ৫৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার কারণে তাদের জরিমানা করা হয়েছে তিন হাজার ৫৩১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ফলে জরিমানাসহ কোম্পানি দুটির মোট ফাঁকি দেওয়া টাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭১ কোটি ১২ লাখ। পটিয়া ভ্যাট বিভাগ এ নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। পরে উদ্ঘাটিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার তথ্য যাচাইয়ে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে জমা দেওয়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদন তৈরির প্রায় আট মাস পর ২০২৪ সালের মে মাসে জমা দেওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এক হাজার ৯১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড এক হাজার ৬২১ কোটি ১২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। কোম্পানি দুটির বিষয়ে ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় নিরীক্ষা কমিটি। পরে নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ২১ মে জমা দেওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, গত ৯ জুন চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ফাঁকি দেওয়া তিন হাজার ৫৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট, তিন হাজার ৫৩১ কোটি ৮১ লাখ টাকা জরিমানা এবং এর ওপর প্রযোজ্য সুদের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পরিশোধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি তা পরিশোধ করেনি। তাগাদা দেওয়া হলেও ভ্যাট পরিশোধের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির বিআইএন লক ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

dhakapost

চট্টগ্রাম কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করা হলে আইন অনুযায়ী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক করার বিধান রয়েছে। ফলে এস আলম গ্রুপের ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধ না করা হলে সহযোগী নয়টি প্রতিষ্ঠানেরও বিআইএন লক করা হবে। ইতোমধ্যে নয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৪১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন ও দাবিনামা জারি করা হয়েছে।

ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রানুসারে, এস আলম গ্রুপের সহযোগী ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান (এস আলম স্টিল লিমিটেড, ইউনিট-২) বন্ধ রয়েছে। বাকি নয়টি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি সুদসহ প্রায় এক হাজার ৪১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এস আলম স্টিলস লিমিটেড (ইউনিট-১ ও ৩) ৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা; চেমন ইস্পাত লিমিটেড ১৪৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; এস আলম রিফাইন্ড সুগার ৭৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা; এস এস পাওয়ার লিমিটেড ২০০ কোটি ৮ লাখ টাকা; এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড ২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা; এস আলম প্রোপারটিজ লিমিটেড পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ টাকা; এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ২১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা; এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড ৩১ লাখ টাকা ও এস আলম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভ্যাট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূসক আইনের ধারা ৯৫ অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করলে সহযোগী প্রতিষ্ঠানেরও বিআইএন লক করা যায়। এস আলমের ওই দুই প্রতিষ্ঠান বকেয়া সাত হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে আইন অনুযায়ী বকেয়া আদায়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিআইএন লক করার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা ওই পদক্ষেপে যাব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/