শিরোনাম
সুন্দরবনে অস্ত্র গুলিসহ জলদস্যু বাহিনীর দুই সহযোগী আটক, দুই জেলে উদ্ধার গাইবান্ধায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত তিন পুলিশ সদস্যের  র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসীর দাবি গল্লামারী ব্রিজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে জর্ডানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা – দৈনিক গনমুক্তি গাজায় একদিনে আরও ৪৪ জনকে হত্যা ইসরায়েলের পেশা ছেড়ে দিচ্ছে লবণচাষীরা – দৈনিক গনমুক্তি ঝিনাইদহে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা, লুটপাট ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ ঘোষণার বাস্তবায়নের দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন বগুড়ায় নুর আলম হত্যা মামলার আসামি বার্মিজ চাকুসহ গ্রেপ্তার সোনাইমুড়ীতে প্রবাসীর বিধবা স্ত্রীর ৮০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

হাতে হাতে পলিথিন 

Reporter Name / ৪৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

  • হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

  • নেই বিকল্প ব্যবস্থা আমলে নেয়নি ব্যবসায়ীরা

আইন করে অভিযান চালিয়ে, জেল জরিমানা এবং প্রচার-প্রচারণার পরও রোধ করা যাচ্ছে না নিষিদ্ধ পলিথিন। গত বছরের ৩ নভেম্বর নিষিদ্ধ করা হয় পলিথিন। মার্কেট থেকে নিত্যপণ্যের বাজার সবখানেই দিন দিন বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানেই। এককথায় বলা চলে, হাতে হাতে পলিথিন। পলিথিন নিষিদ্ধের আগে এর বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। এ কারনে বিষয়টিকে ব্যবসায়িরা আমলে না নিয়ে উপহাস করছেন। জেল জরিমানাও রোধ করা যাচ্ছে না পলিথিনের ব্যবহার। পহেলা নভেম্বওে নিষিদ্ধ করা হয় পলিথিন। এরপর থেকে তিনমাস অতিবাহিত হলেও বিকল্প ব্যবস্থা জোরদার করতে পারেনি প্রশাসন।
সম্প্রতি কাঁচা বাজারে মাঠে ঘাটে পরিস্থিতি দেখলে বুঝার উপায় নেই যে, পলিথিন নিষিদ্ধ। যা মাটি ও পানির নিচে অক্ষত থেকে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনসাস্থ্য ও পরিবেশ। ফলে প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে পলিথিনের বিস্তার ঘটছে এমনটাই মনে করেন সাধারণ মানুষ। অথচ আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের বাজারে নেই তেমন কোন ভূমিকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্ষতিকর পলিথিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে মানব স্বাস্থ্য।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০০২ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ৩ নভেম্বর থেকে টাস্কফোর্স অভিযান শুরু করেছিল। এছাড়াও আইন অমান্য কারীর জন্য রয়েছে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান। বাজারজাতকারীকে ছয় মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১ অক্টোবরে সুপার শপে পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যবহার নিষিদ্ধের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর ১ নভেম্বর থেকে দেশের সর্বত্রই পলিথিন ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর বার্তা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভোগ্য পণ্যের কাঁচাবাজার, পুরাতন বাজার, নতুন বাজার এবং ভাইনা কাঁচাবাজারে পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যাগ ক্রেতাদের হাতে দেখা যায়নি। মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, সবজ্? ডিম, ফল ও মিষ্টি যাই কেনা হোক সব পণ্যই পলিথিনে ভরবে। তবে সবজি বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বেশি। আবার পলিথিন ছাড়াও রয়েছে মোড়কজাত পণ্য। একজন ক্রেতার কেনাকাটা শেষে দেখা যায় হাতে রয়েছে পণ্য ভর্তি ৬টি পলিথিন ব্যাগ। তারমধ্যে ৪টি ব্যাগে সবজি এবং দু’টি ব্যাগে আটা, লবণ আর নুডুলস। সব মিলিয়ে পলিথিনের সংখ্যা ৯ টা।
এভাবেই পলিথিন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্রই। ফলে ক্ষতিকর পলিথিন জমা হচ্ছে উর্বর জমিতে, বাড়ির আঙিনায়, ড্রেন, নদী ও খালে। যার প্রভাব পড়ছে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর। অন্যদিকে জেলার নবগঙ্গা নদী, কুমার নদীর ও চিত্রা নদী বাজার সংশ্লিষ্ট হওয়ায় নদী পাড়ে পলিথিন ফেলে স্তুপ করা হয়েছে। ফলে পানিতে ভেসে গিয়ে নদীর তলদেশে জমা হচ্ছে পলিথিন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া ঝর্ণা এবং মাছের প্রজননের স্থান। এতসব ক্ষতি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নেই তেমন কোন কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে জরিমানা করেন।
পুরান ঢাকার চকবাজার থানার অদূরে বেগমবাজার, চকবাজার ও মৌলভীবাজারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পলিথিন শপিং ব্যাগ বিক্রি হয়। বিভিন্ন মার্কেটে বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য অনুমোদিত পলিথিন সামগ্রীর আড়ালে শপিং ব্যাগের নমুনা রাখা হয়। ওই সব নমুনা দেখিয়ে বিক্রির চুক্তির পর তা গুদাম অথবা কারখানা থেকে সরবরাহ করা হয়। পলিথিন সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয় নির্দ্দিষ্ট পরিবহনের ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান। পুরান ঢাকার প্যাকেজিং বা প্লাস্টিক কারখানার মালিকেরাই মূলত এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মধ্যে আছেন হাজী মোতালেব, টেপা জাফর, হাজী শফি মাহমুদ, হাজী সাব্বির, হাজী ডাব্লু, মোখলেছ মেম্বার, হাজী ওসমান, হাজী লাট মিয়া, হাজী উমেশ, মাউড়া জামিল, খালেদ সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলী, আমির হোসেন, মঈনুল, মজিবুর, পলাশ, জুয়েল, মিজান, লতিফ ও সাহাবুদ্দিন। আলাপকালে সোয়ারীঘাটের পলিথিন কারখানার এক কর্মচারী জানান, সোয়ারীঘাট, দেবীদাসঘাট ও কামালবাগে শতাধিক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে হাজী আনোয়ার, আবদুস ছালাম, পলাশ, জুয়েল, হাসান, হাজী রহিম, হাজী জব্বার, মোটকা আনোয়ার, নাসুর ছেলে বাবু, ফারুক, রহমত, দানা আনোয়ার, শরীয়তপুরের রহমান, মারুফ, পারভেজ, নোয়াখাইল্যা বাবুল, হেংলা আনোয়ার, বিকি, জেকি ও টেপা জাফরের কারখানায় কোটি কোটি টাকার পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে।

ইসলামবাগের একজন কর্মচারী জানান, এই এলাকায় জাবেদ হোসেন পাপ্পু, কালা জাহাঙ্গীর, জালাল, দৌলদ্দিন, আব্দুল কাদির, আল-আমিন, আবু, জালাল, আশ্রাফ, লিটন চৌধুরী, শরীয়তপুরের সিরাজ, হাজী আক্কাস, আব্দুল কুদ্দুস, মিজান, আরিফ, হেলাল, এমদাদ, মোখলেছ মেম্বার ও দিনাজপুরের হান্নানের নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা রয়েছে। কোনো কোনো কারখানা রাতদিন চলে। কোনটাতে দিনে প্যাকেজিং এর কমবেশি কাজ চলে। রাতে তৈরী হয় পলিথিন। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকায় প্রতিদিন এক কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন হয়। এসব ব্যাগের কারনে ড্রেন, নালা, খাল, ডোবা ইত্যাদি অতি দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং পানি ও ময়লা নিস্কাশনে বাধার সৃষ্টি হয়। স্কুল শিক্ষিকা মনিরা বেগম বলেন, উপায় কি বাজারের ব্যাগ সবসময় বয়ে নিয়ে বেড়ানো যায় না। পলিথিন ব্যাগে পণ্য কিনলাম বাড়ি গিয়ে ফেলে দিলাম। সুবিধা আছে কিন্তু পলিথিন ক্ষতিও করে।
চকবাজারের তাঁতখানা লেনের পলিথিন ব্যবসায়ী খোকন বলেন, জানি পলিথিন বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে। সরকার পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের ব্যবস্থা করলে ক্রেতা বিক্রেতার জন্য ভালো হয়। এবং আমরা বৈধভাবে ব্যবসাটা করতে পারবো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান জানান, মাগুরা জেলায় নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রয়ের দায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত করে এখনো পর্যন্ত কাউকে কারাদ- দেওয়া হয়নি। তবে ইতোপূর্বে, ব্যবসায়ীদের নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে অর্থদ- দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. টিটু বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের সমগোত্রীয় মাইক্রো প্লাস্টিক এখন বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এটা এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে মায়ের দুধেও মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমি মনে করি ক্ষতিকর পলিথিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে মানব স্বাস্থ্য।

The post হাতে হাতে পলিথিন  appeared first on দৈনিক গনমুক্তি.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/