সওজের তিন কোটি টাকার গার্ডার সেতু অকেজো

Reporter Name / ২৯ Time View
Update : শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের পশ্চিম ঢাকা রোডে পানি নিস্কাশনের খালের ওপর পুরানো কালভার্ট ভেঙ্গে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। আগামী জুন মাসের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
কিন্ত যে খালে পানি নিস্কাশনের জন্য সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয়ে সওজ সেতু নির্মাণ করছে সেই খালের মুখ ভরাট করে সেখানে বিপনীবিতান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এতে বর্ষায় পৌর শহরে জলাবদ্ধতার শঙ্কার কথা জানিয়ে গত ২১ জানুয়ারী বগুড়া ও নওগাঁর জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপরও খালের বন্ধ মুখের সামনে সেতু নির্মাণ হলে পানি নিস্কাশনে সেটি কোনো কাজে আসবে না।

সওজ সূত্রে জানা যায়, দুই জেলার সীমান্তে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পশ্চিম ঢাকা রোডের চারমাথার পূর্বপার্শে¦ একটি খালের পুরানো কালভার্ট ভেঙে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গার্ডার সেতু নির্মাণ করছে সওজ। গত বছরের ১৪ জুলাই নওগাঁর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিনুল ইসলাম ট্রেডার্স কার্যাদেশ পেয়ে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।

কার্যাদেশ অনুযায়ী, আগামী ২৬ জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্ত যে খাল পারাপারে প্রায় ৩ কোটি টাকার সেতু নির্মাণ চলছে সেই খালেরই মুখ ভরাট করে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেখানে বিপনীবিতান নির্মাণ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বর্ডার গার্ড কাজী আব্দুর রশিদ নামে স্থানিয় এক ব্যক্তি। আব্দুর রশিদের মৃত্যুর পর বর্তমানে এসব জায়গা তার ছেলেদের দখলে রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশ্চিম ঢাকা রোড থেকে খালটি উত্তর দিকে বশিপুর হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রক্তদহ বিলের খালে মিশেছে। দক্ষিণেও খালের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। দক্ষিণে সান্তাহার সরকারি কলেজ ও নাটোর বাইপাসের পাশ দিয়ে রক্তদহ বিলে মিশেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে সান্তাহার ঢাকা রোড থেকে পৌর শহরে প্রবেশ পথে উত্তর-দক্ষিণ আড়াআড়ি খালের ওপর ঠিকাদারের নিয়োগ করা শ্রমিকরা সেতু নির্মাণের কাজ করছেন। নির্মাণ কাজ চলা সেতুর দক্ষিণে খাল ভরাট করা হয়েছে অনেক আগেই। খালের মুখ ভরাট করে সেখানে বিপণীবিতান নির্মাণও করা হয়েছে। সেই অবস্থায় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলওয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ খালটি বৃটিশ আমলের। ২০০৫ সালের দিকে খালের দক্ষিণমুখ ভরাট করে সেখানে বিপনী বিতান নির্মাণ করেছিলেন কাজী আব্দুর রশিদ। সেসময় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। এজন্য খালের জায়গা মালিকানা দাবি করে তিনি তা ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন।

মাহমুদ আলী আকবর নামে স্থানিয় আরেকজন ব্যক্তি বলেন, এ খাল দিয়ে পৌর শহরের বেশকিছু এলাকার পয়:নিস্কাশন হয়। সেই খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এলাকাবাসী একবার একজোট হয়ে স্থাপনা ভাঙতে গেলে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু এ ঘটনায় উল্টো আবদুর রশিদই বাদি হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে মামলা দেন।

স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী শাহ জালাল বলেন, ১৯৯৫ সালে বন্যায় খাল ক্ষতিগ্রস্থ হলে খালের জায়গায় গোডাউন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বর্ষায় নতুন বাজার, বোয়ালিয়া ও নতুন সাহাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, খালের মুখ ভরাট করে বিপনীবিতান নির্মাণ করা হয়েছে। অপসারণ করতে গেলেই এলাকাবাসীকে মামলা দিয়ে হয়রানী করানো হয়।
সান্তাহার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা উচ্ছেদ করতে গেলে আমাকেও মামলা দিয়ে হয়রানি করানো হয়েছিল। এখন খাল পারাপারে সেতু নির্মাণে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও তা এলাকাবাসীর কোন কাজে আসবে না।

সমাজকর্মী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, পয়:নিস্কাশন নিশ্চিত করতে খালের মুখে নির্মিত স্থাপনা অপসারণে দুই জেলা প্রশাসককে অভিযোগ দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেতু নির্মাণের আগে খালে পানি নিস্কাশন নিশ্চিত করতে সওজকে অনুরোধ করা হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।

মরহুম কাজী আব্দুর রশিদের ছেলে আতিকুর রহমান রিপন বলেন, ‘বিপনীবিতানটি ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় রয়েছে। তাছাড়া সরকার সেটি অ্যাকোয়ার করে নিলেও নির্মাণাধীন এই ব্রিজ দিয়ে পানি প্রাবাহিত হবে না। কারন বিপনীবিতানের পিছনে বাড়ি ঘরসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে।

পানি প্রাবাহের বিষয়টি মাথায় না রেখেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য এতো বড় একটি প্রকল্প এখানে বাস্তবায়ন করা ঠিক হচ্ছে না। স্থানিয় কিছু লোক আছে শত্রুতামূলকভাবে আমাদের বিপনীবিতানটাকে সরকারি খাস জায়গায় বলে প্রচার করছেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আমাদের কবলাকৃত সম্পত্তি। সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন না ধরায় যোগাযোগ করা যায়নি ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/