আমিনুল হক ভূইয়া
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির ওপরে। এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য সুখবর আছড়ে পড়লো গতকাল সোমবার। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুবিধা দিতে তিনস্তরে অত্যাবশ্যকীয় সেবাটির দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইউনূস সরকার। বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবাখাত লুটপাটের এক উর্বর ক্ষেক্র হিসাবে পরিণত করে পলক-ঝলক, সালমান আর আজিরা। এক্ষেত্রে পলক ছিলো ক্যাশিয়ারের ভূমিকায়। আর শেখ পরিবারের জন্য জয় এখাত থেকে হাজারো কোটি টাকা লুটের অংশিও ছিলেন, উল্লেখিত ব্যক্তিরা। রিক্সার পেছনে মটর লাগেয়ে স্মাট বাংলাদেশ ঘোষণাকারী শেখ হাসিনা ও তার দল প্রযুক্তিখাতে ইচ্ছে মাফিক দুর্নীতি ও লুটপাটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন, তারই পুত্র সচিব ওয়াজেদ জয়। একারণে বাধাহীন দুর্নীতি চলতে থাকে দূরন্ত গতিতে। অথচ মানুষ কাঙ্খিত সেবা না পেলেও দুর্নীতি থেমে থাকেনি। এসব অভিযোগ সংশ্লিষ্টখাতের সঙ্গে জড়িতদের।
চব্বিশের গণঅভ্যূত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর নিরবচ্ছিন্ন দূর্নীতি চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে শেখ হাসিনার কাছের সালম এফ রহমান, আজিজ খান, সজিব ওয়াজেদ জয়, জুনায়েদ আহমেদ পলক গংরা সম্মিলিত ভাবে প্রযুক্তিখাতে লুটপাটের পাহারাদার হয়ে বসে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের অন্যতম নিশায় ছিলো টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটখাত। যার নেতৃত্ব দেয় সামিট ও বেক্সিমকো গ্রুপ। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল, পরে রিক্সার পেছনে মটর লাগিয়ে স্মার্ট, বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট সঞ্চালন ব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপের লাইসেন্স দেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। সেই বিবেচনায় ইন্টারনেট বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণই আওয়ামীপন্থি এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে। ইন্টারনেটের মূলত দুটি পর্যায়-ডেটা এবং ভয়েস। আর দুই পর্যায়েরই মাফিয়া সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামীপন্থি সামিট কমিউনিকেশন্স ও বেক্সিমকো গ্রুপ। পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দলের পঙ্গু ও অসুস্থ ছাড়া প্রায় সকল নেতা-নেতৃত্রীদের এখন আর কোন খোঁজ মিলছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় এমন নজিরবিহীন ঘটনা আর কোন দেশে ঘটেছে বলে ইতিহাস নেই।
গত বছরের ৮ আগস্ট নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর অত্যাশ্যকীয় সেবাটি দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্টার লিঙ্ক’কে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে করে বাজারে প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। ইন্টারনেট সেবায় নিয়োজি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দাম কমানোর বিষয়ে একমত হলেও তিন মোবাইল কোম্পানী ইন্টারনেটের দাম কমানোর কোন ঘোষণা দেয়নি। তবে, সরকার তিন স্তরে দাম কমানোর কার্যকর হলে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করেন তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা।
গতকাল সকাল সকাল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুখবর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব লিখেন, নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে, আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন বা ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য হ্রাস করবেন তারা। এদিন সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানান তিনি।
এর আগে আইএসপি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঁচ এমবিপিএসের পরিবর্তে ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তারও আগে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সকল আইআইজি এবং আইএসপি গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে। এ নিয়ে ইন্টারনেট লাইসেন্স রেজিমের মোট তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি আছে শুধু মোবাইলসেবা দাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানোর ঘোষণা। ইতোমধ্যেই সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা প্রদান করেছে। তিনি আরও লিখেছেন, এমতাবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না। সরকার মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামও কমিয়েছে। এখন তাদের জাতীয় উদ্যোগে শরিক হওয়ার পালা।
ঈদুল ফিতরের দিন থেকে সরকারি মোবাইল সেবা তো কোম্পানি টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার আশা করে অতি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য পতনের ঘোষণা দেবে। সরকার এখানে দুই ধরনের মূল্য ছাড় আশা করে, মার্চ মাসে এসআরও অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ মোবাইল কোম্পানিগুলো যে মূল্য বাড়িয়েছিল সেটা কমাবে। এ ক্ষেত্রে সরকার শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে তা থেকে সরে এসেছে, কিন্তু সে মতে বর্ধিত মূল্য কমায়নি মোবাইল কোম্পানিগুলো। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে/আইটিসি, আইআইজি এবং ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতটুকু পাইকারি দাম কমানো হয়েছে তার সমানুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমাবে। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের মানে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এমতাবস্থায় গ্রাহকস্বার্থে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
https://slotbet.online/