জ্ঞান অর্থবহ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি – দৈনিক গনমুক্তি

Reporter Name / ৬ Time View
Update : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

শেয়ার-নেট বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে শুধু একটি নেটওয়ার্ক নয়, বরং একটি জীবন্ত ইকোসিস্টেম, যেখানে গবেষণা, নীতি, চর্চা এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা একে অপরের সাথে মিলে বাস্তবসম্মত সমাধান সৃষ্টি করছে।

এক দশক আগে বাংলাদেশে শেয়ার-নেট বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একটি এমন জায়গা তৈরি করা, যেখানে জ্ঞান হবে অর্থবহ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি, বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (ঝজঐজ) বিষয়ে। আজ, দশ বছর পর, সেই স্বপ্নের বীজ এক শক্তিশালী, প্রাণবন্ত নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে, যেখানে রয়েছে ২০০০-এরও বেশি ব্যক্তি সদস্য এবং ১৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানিক সদস্য। এই নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে, কথোপকথনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং সম্প্রদায়গুলোকে ক্ষমতায়ন করেছে।
২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল, এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপিত হয় বাংলাদেশে ঝজঐজ জ্ঞান ব্যবস্থাপনার এক দশক শিরোনামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। শেয়ার-নেট বাংলাদেশ এই আয়োজন করে এবং রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস আয়োজক হিসেবে সহায়তা করে। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এটি অনুষ্ঠিত হয় হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরি, ঢাকায়। এটি ছিল কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি ছিল একটি আত্ম-অনুসন্ধানের ক্ষণ সাফল্যের স্মরণ, কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে অঙ্গীকারের মুহূর্ত, যেখানে প্রতিটি মানুষের ঝজঐজ অধিকার বাস্তবায়িত হবে।
শুধু জ্ঞান নয়, বরং জ্ঞানের ভাগাভাগি, অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োগই পরিবর্তনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালায় এই বিশ্বাস ছিল পুরো আয়োজনের মূল সুর। ফলাফল আহরণের আলোচনা থেকে শুরু করে সরাসরি জরিপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা প্রতিটি পর্বেই দেখানো হয় কীভাবে অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কর্মমুখীভাবে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে শেয়ার-নেট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশের সমন্বয়কারী ডা. ফারহানা হক আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান সব অংশীদার, সদস্য ও সহযোদ্ধাদের প্রতি, যাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি এই এক দশকের সাফল্যের ভিত্তি। বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ফলপ্রসূ সহযোগিতা, সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলিকে, যা শেয়ার-নেট বাংলাদেশের যাত্রাকে গড়ে তুলেছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মান্যবর থেইস ভাউডস্ট্রা, ঝজঐজ বিষয়ে নেদারল্যান্ডস সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানবাধিকার ও ঝজঐজ -এর অবিচ্ছেদ্য সংযোগ কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, শেয়ার-নেট বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো প্রমাণ করেছে যে, জ্ঞান হতে পারে অ্যাডভোকেসি, সংলাপ ও পরিবর্তনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
গত এক দশকে শেয়ার-নেট বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে শুধু একটি নেটওয়ার্ক নয়, বরং একটি জীবন্ত ইকোসিস্টেম, যেখানে গবেষণা, নীতি, চর্চা এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা একে অপরের সাথে মিলে বাস্তবসম্মত সমাধান সৃষ্টি করছে। শেয়ার-নেট বাংলাদেশের ১০ বছর বিষয়ক সেশনে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ জান্নাতুল মুনিয়া তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত যাত্রার গল্প শেয়ার করে বলেন, শেয়ার-নেট বাংলাদেশ আমাকে আজকের আমিতে গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় প্রভাব তৈরি করতে পারে। পুরো অনুষ্ঠানে একটি বার্তা সবচেয়ে বেশি প্রতিধ্বনিত হয়েছে সম্প্রদায়ের মালিকানা। রিফা তামান্না ও সাজেদ করিমের নেতৃত্বে সরাসরি জরিপ সেশনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং সমালোচনামূলক মতামত শেয়ার করেন। তরুণ নেতৃত্ব, গবেষক এবং কর্মীসহ ঝজঐজ ক্ষেত্রের নানা প্রান্তের কণ্ঠস্বর ছিল উচ্চকিত। অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং খ্যাতনামা অধিকারকর্মী ডা. হালিদা হানুম আখতার আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ঝজঐজ ছিল, আছে এবং থাকবে আমার জীবনের পথচলা। এই কাজে নিবেদিত আরও অনেক মানুষের সাথে যুক্ত হয়ে আমি আবার আশ্বস্ত হই আমরা একা নই। আমরা সবাই মিলে একটি আন্দোলন।
যুব কণ্ঠের অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলকতা বাড়ানোর মতো ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকারগুলোও এই আয়োজনে উঠে আসে, বিগত দশকের সমৃদ্ধ অবদানগুলোর পাশাপাশি । একটি বিশেষ পর্বে অংশগ্রহণকারীরা পরিসংখ্যানকে মানবিক করে তোলার চমৎকার উদ্যোগ নেন – শুষ্ক সংখ্যাগুলোর ভেতর লুকানো জীবনের গল্পগুলো প্রকাশ করেন। মনে করিয়ে দেওয়া হয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একজন মানুষ, একটি জীবন, একটি গল্প যা জানানোর যোগ্য। ইউএনএফপিএ-র ফোকাল পার্সন ডা. মোহাম্মদ মুনির হোসেন গুরুত্বের সাথে বলেন, ডিজিটাল বিভাজন কমানোর এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি, যেন ঝজঐজ আলোচনায় কেউ পিছিয়ে না থাকে। শেষে, শেয়ার-নেট বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী আবেগঘন আহ্বান জানান, শেয়ার-নেট বাংলাদেশ এখানেই থামবে না। আমাদের গত দশকের যাত্রায় আমরা গর্বিত, কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আরও বেশি আশাবাদী। আসুন আমরা আমাদের প্রভাব আরও গভীর করি, বিস্তৃত করি এবং নতুন প্রজন্মের ঝজঐজ নেতৃত্বকে গড়ে তুলি।
আজকের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, আর শেয়ার-নেট বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো হবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেবল জ্ঞানবাহক হিসেবে নয়, বরং আরও ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুস্থ ভবিষ্যৎ নির্মাণের অগ্রদূত হিসেবে। এক দশক আগে শেয়ার-নেট বাংলাদেশ একটি বীজ রোপণ করেছিল। আজ এটি একটি ঘন ছায়া দেওয়া বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এখন লক্ষ্য একটি সমৃদ্ধ বন তৈরি করা, যেখানে জ্ঞান, ক্ষমতা ও সম্ভাবনা হাত ধরে এগিয়ে যাবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/