আগে মামলা নিষ্পত্তি ও পরিবেশ সৃষ্টি তারপর ফিরবেন তারেক রহমান

Reporter Name / ৩ Time View
Update : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫


হালিম মোহাম্মদ

  • আপডেট সময় :
    ০১:১৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫




    ৩৮

    বার পড়া হয়েছে

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News)
ফিডটি

প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা স্বৈরাচারী সরকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও দেশে ফেরেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। চার মাস আগে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন লন্ডন যাচ্ছিলেন তখন নেতা-কর্মীরা মনে করছিলেন, সঙ্গে পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে দেশে ফিরবেন।
কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ মে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান ফেরার কথা থাকলেও তারেক রহমান আসছেন না। কেন আসছেন না সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মনে।
তিনি এতদিনেও দেশে না ফেরায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এটা কি শুধু আইনি জটিলতা নাকি রাজনৈতিক কোনো বোঝাপড়ার বিষয়। তবে আইনি জটিলতা ছাড়া বাকি বিষয়গুলো উড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরিবেশ সৃষ্টি হলেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকরা জানতে চান, জোবাইদা রহমান ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন। তারেক রহমান কবে নাগাদ ফিরবেন। কারণ আপনি চার মাস লন্ডনে তার সঙ্গেই ছিলেন। জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনি একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী মন আছে সেই অনুসন্ধানী মন থেকে আপনাদের বোঝা উচিত জোবাইদা রহমান ১৭ বছর পর আজকে এসেছেন। ব্যারিস্টার জায়মা রহমান (তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মেয়ে) আমেরিকাতে একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মাঠে এসে যে নেতৃত্ব উনি বৃটেনে (যুক্তরাজ্যে) বসে দিচ্ছেন, সেই নেতৃত্ব অর্থাৎ শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেবেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে হয়ত সেই পরিবেশ হয়ে যাবে এবং উনি আসবেন।
চার মাস পর মঙ্গলবার সকালে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানকে নিয়ে দেশে ফেরেন।
জোবাইদা রহমান কতদিন থাকবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘ডা. জোবাইদা রহমান ম্যাডামের সঙ্গে এসেছেন এবং এটা শুরু নয়, এটা উনাদের দেশ। উনারা আসবেন এটাই স্বাভাবিক। আসতে দেয়া হয় নাই, সেজন্য আসতে পারেন নাই। আর সময় বলে দেবে যে, উনি কয়দিন থাকবেন।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারেক রহমান সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই দেশে ফিরবেন। মামলা সংক্রান্ত যেসব আইনি জটিলতা আছে সেগুলো কেটে গেলে তিনি মাতৃভূমিতে পদার্পণ করবেন। তারেক রহমানের আইনজীবীও আইনের শাসনেই ভরসা রাখছেন।
বিএনপি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনের শাসন ব্যতীত গণতন্ত্র চলবে না। তারেক রহমান চাচ্ছেন আইনি প্রক্রিয়ায় (ডিউ প্রসেস অফ ল’) শেষ করতে। আইনের শাসনের মাধ্যমে সেটা করতে হবে। শেখ হাসিনার মতো একটা অর্ডার দিয়ে আপনি সব মামলা বাতিল করে দিলে তো হবে না। ওইটা আইনের শাসনের আওতায় আসে না। এটা করলে জনগণের আস্থা থাকবে না, আইনের শাসনও ফিরে আসবে না। আইনের শাসন ব্যতীত গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না। উনি এসব মামলা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করেই দেশে ফিরবেন, শিগগিরই ফিরবেন। ’ অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের আশা, ‘তারেক রহমানও খুব শিগগিরই দেশে আসবেন’।
তারেক রহমানের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘তারেক রহমান খুব শিগগিরই আসবেন। আইনি যে জটিলতা ওনার জন্য রয়েছে, সে জটিলতা আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখনো কিছু মামলার রেজাল্ট পেন্ডিং (অপেক্ষমাণ)। দেশে এবং দেশের বাইরে লন্ডনেও। সবকিছু মিলিয়ে উনি শিগগিরই আমাদের মাঝে আসবেন, আমরা তার অপেক্ষায় আছি।
তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বিশেষ কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি চায় সব আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে শেষ করে তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে আসুন। কোনো প্রকার আইনি ব্যত্যয় ঘটুক এমনটি আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা দ্রুত সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার কাজ করছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনিও দেশে ফিরবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ-নাতনিরাও দেশে ফিরছেন। আমরা আশা করি তারেক রহমান দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন। আইনি জটিলতা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন।
তারেক রহমান সব সাজা থেকে খালাস পেলেও একটি মামলায় তার দ- রয়ে গেছে। মামলাটি আলোচিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে করেছিলেন দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক জহিরুল হুদা। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদ- দেন ঢাকার একটি আদালত। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে ডা. জুবাইদা রহমানের দ-াদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা সব সময় যে কথা বলে আসছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং ডা. জুবাইদা রহমান ম্যাডামসহ যারা আছেন, প্রত্যেকটা মামলায় জিয়া পরিবার আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাসী। দেশের প্রচলিত সংবিধানের প্রতি বিশ্বাসী এবং আদালতের প্রতি আস্থাশীল। ওনাদের মামলাগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে নিষ্পত্তি হবে।
আলোচিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ খ্যাত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশব্যাপী কথিত অভিযানে নামে। সেনাসমর্থিত ওই সরকারের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ীদের আটক করা হয়। ওই বছরের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি। লন্ডনযাত্রার কয়েক ঘণ্টা আগে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তারেক রহমান।
২০০৮ সালের ঢাকায় সেদিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন জেমস এফ মরিয়ার্টি। ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে তিনি সেসময় গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছেলেন। সেগুলোর সবকিছু উইকিলিকস সাইটে ফাঁস হয়। ওই তারবার্তার একটিতে মরিয়ার্টি লিখেছিলেন, ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন উচ্চপদস্থা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন। ৩ সেপ্টেম্বর মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে সে তারাবার্তা পাঠান বলে সেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মরিয়ার্টি জানান, ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্রি. আমিনের আলোচনা হয়, যেখানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তি ও মুক্তির পর তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আলাপ ওঠে। এছাড়া রাজনীতি থেকে তারেক রহমানের ‘কিছু সময়ের জন্য বিরতিতে’ যাওয়ার কথাটিও তখন আলোচিত হয়।
বিবিসি বাংলার অনলাইন ভার্সনের ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তার ‘কারাগারে কেমন ছিলাম (২০০৭-২০০৮)’ বইতে লিখেছেন, এমনও হতে পারে তিনি (খালেদা জিয়া) জেনারেলদের সঙ্গে এই সমঝোতা করেছিলেন যে, তারেক রহমান আপাতত নিজেকে রাজনীতিতে জড়াবেন না এবং এ মর্মে তারেক রহমান কোনো সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও দিয়ে থাকতে পারেন। তারেক রহমান লন্ডন যাত্রার আগে তার মা খালেদা জিয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে সুস্থ না হয়ে উঠা পর্যন্ত তারেক রহমান রাজনীতির বাইরে থাকবেন।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা দেশ ছাড়ার এক বছর আগে তথা ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ৮০টির বেশি মামলার মুখে পড়েন। কয়েকটি মামলায় তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে সাজাও দেওয়া হয়। সাজার রায় দেওয়া বেশির ভাগ বিচারক ‘পুরস্কারস্বরূপ’ পদোন্নতিও পেয়েছিলেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তন হলে সিংহভাগ মামলাও নিষ্পত্তি হয়ে যায়। তবে কয়েকটি মামলা এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।


নিউজটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/