আমিনুল হক ভূইয়া
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
বাংলাদেশের সাবেক সরকার, নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেপ্টেম্বর মাসে একটি দল পাঠায় বাংলাদেশে। এর মধ্যে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মরণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।
১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে বিভিন্ন সময় ১ হাজার ৪২৩ নিহত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, জুলাই আন্দোলনে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। জুলাই বিপ্লবে আহতর সংখ্যা ২২ হাজার। আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পঙ্গু বা অঙ্গহানি মানুষের সংখ্যা ৫৮৭ জন। গুলিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ৬৮৫ জন।
প্রথমে কোটা সংস্কার এবং তারপর সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও অগাস্টে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় শহিদ ও আহতদের সর্বশেষ তালিকা জানায় স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সচিব এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম। গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রত্যেক পরিবার এককালীন ৫ লাখ টাকা এবং আহত প্রত্যেক ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে অনুদান পেয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকার ফান্ড প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ফাউন্ডেশনে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
চব্বিশে জুলাই আন্দোলন প্রতিহত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকার নির্বিচারে মানুষ হত্যার পথ বেচে নেয়। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সেসময় আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার পথ বেচে নেয়। যা কিনা গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিহ্নিত হয়। গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরিুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি রয়েছে। একাধিক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে ট্রাইব্যুনালে। গণহত্যার দায়ে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতা রাজপথে নামে। টানান কয়েকদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ডাকা জরুরি বিশেষ দীর্ঘ আলোচনায় গণহত্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের কথা জানানো। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধ স্থগিতের ঘোষণা আসে।
বৈঠকে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। কোনো দল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিন থাকতে হবে। এর আগে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধনী অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। এর আগে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্য জানান।
https://slotbet.online/