সৌদি আরবে ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি দুই ভাইকে হত্যা

Reporter Name / ৪ Time View
Update : শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫


কানাডা যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা কামরুজ্জামান কাকন। চাকরি ভিসায় কানাডা যাওয়ার জন্য বাহার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছে ৩ লাখ টাকাও দিয়েছিলেন। গাজীপুর মহানগরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে কাকনকে শেষ পর্যন্ত সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে কাকনের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম সাগরকে ভালো বেতনে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব দেন তিনি। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সাগরকে পাঠানো হয় সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে। পরবর্তীতে কাকনকেও কৌশলে বাহার তার ছোট ভাই সাগরের কাছে পাঠান। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাটে এই দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সৌদি পুলিশ ফ্ল্যাট থেকে কাকন ও সাগরের মরদেহ উদ্ধার করেছে। হত্যার খবর রাতেই গাজীপুর মহানগরের উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে পৌঁছে।

নিহত কাকন ও সাগরের স্বজনরা জানান, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কাকন চাকরির সন্ধান করছিলেন। এরই মধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে চাকরি ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে কাকননের ছোট ভাই সাগরকে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব করেন বাহার উদ্দিন। ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি পাঠানো হয় সাগরকে।

স্বজনরা বলেন, কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় পরিবারের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন সাগরের বাবা মোশারফ লম্বরি। মোশারফ হোসেন বলেন, টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। পরে কাকনকেও সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন।

মোশারফ হোসেন লম্বরি বলেন, ‘নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন ওমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে দুই ছেলেকে দেখে আসার প্রস্তাব করেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, গিয়ে দেখি খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে ছেলেদের। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। তবে কাকন ও সাগরের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে সৌদি আরব থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার পলিথিন মোড়ানো একটি ব্যাগ দিয়ে তা ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে সেই পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। ব্যাগে থাকা পুটলি ফেরত চান।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন পুলিশ পুটলিটি রেখে দিয়েছে জানালে সেটিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলে জানান মোশারফ। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে। এসব ঘটনায় তিনি গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী নিয়ে এসে অস্ত্র উঁচিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। জিম্মি করে মোশারফরের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশরফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।’

মোশারফ হোসেন বলেন, আমার আর কেউ রইলো না। দুইটা সন্তানই আমার ছিল। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলেকে হত্যার খবর দিয়েছে। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারে ধারণা মোশারফ হোসেনের।

গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো খবর আমাদের জানানো হয়নি। তবে পরিবার জানিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/