পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বান্দরবান, মারা গেছেন ১০৫

Reporter Name / ৪৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫


পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্কজনক প্রপঞ্চের নাম পাহাড় ধস। টানা ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর ফলে পুরো বান্দরবান জেলায় দেখা দেয় পাহাড় ধসের আশঙ্কা। জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় পাহাড় ও টিলা কেটে বসতঘর নির্মাণ এবং পাহাড় কাটার মহোৎসবের কারণে প্রতি বছরই পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি ও মামলার মাধ্যমে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা বন্ধ হয়নি। ফলে গত এক দশকে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৫ জন।

বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে কয়েক হাজার পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। জেলা শহরের কালাঘাটা, বনরুপা, বীর বাহাদুর নগর, লাঙ্গেপাড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন বহু মানুষ। শুধু জেলা শহরেই নয়, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতেও একই চিত্র দেখা যায়। উঁচু পাহাড় কেটে বসতঘর নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে দুর্ঘটনা ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একাধিকবার বলা হলেও অনেকেই সেসব স্থানেই থেকে যাচ্ছেন। প্রতি বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় আগের বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে শিশুসহ ১০ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়িতে ২ জন, ২০১২ সালে লামার ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০ জন, ২০১৩ সালে পৌর শহরের কালাঘাটায় ২ জন, ২০১৪ সালে জেলা সদরে ৪ জন, ২০১৫ সালে লামায় ৬ জন এবং বনরুপা পাড়ায় ৩ জন, ২০১৭ সালে কালাঘাটায় ৭ জন এবং রুমা সড়কে ৫ জন, ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ জন ও লামায় ৪ জন, ২০১৯ সালে লামায় ১ জন, ২০২০ সালে আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের ৩ জন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে ২ জন এবং সর্বশেষ চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়িতে ১ জন কৃষক পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী ও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতিভারী বৃষ্টির ফলে বান্দরবানসহ চারটি পার্বত্য জেলায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বান্দরবান
পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বান্দরবান

প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির দাম সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বসতি গড়ে তুলছেন। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং নিহতদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে না নিলে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন মন্ডল জানিয়েছেন, বান্দরবানে মঙ্গলবার থেকে প্রায় পাঁচ দিন টানা বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির সঙ্গে হালকা ঝড়ো বাতাসও বইবে। ফলে পাহাড়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন, তাদের জন্য পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক শামিমা আরা রিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয় এবং আমরা চেষ্টা করি সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে, যাতে কেউ কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/