দুর্ভিক্ষের মুখে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ!

Reporter Name / ৪৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫


দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন এক সময় পর্যটকে মুখর থাকত। সেখানকার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে লাখো পর্যটকের পদচারণায় জমজমাট থাকত এই দ্বীপ। তবে পরিবেশ সংরক্ষণের যুক্তিতে সম্প্রতি সরকার ভরা মৌসুমেও পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে দ্বীপে বসবাসরত প্রায় দশ হাজার মানুষের জীবন যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দ্বীপে এখন নিরবতা আর নিস্তেজতা। নেই কোনো কর্মব্যস্ততা, দোকানপাট বন্ধ, পর্যটন ব্যবসা স্থবির। কেউ সাগরের পাড়ে বসে আছে, কেউ জেটি ঘাটে কিংবা ফাঁকা দোকানে। কারো চোখেমুখে নেই আশার আলো—শুধুই দুশ্চিন্তা। কেউ হয়তো ঘরে চালের অভাবে চিন্তিত, কেউ চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছে না। দ্বীপের একমাত্র হাসপাতালেও নেই কোনো চিকিৎসক।

সেন্টমার্টিনবাসীর জীবনযাত্রা মূলত পর্যটন এবং মাছ ধরাকে ঘিরেই। তবে চলতি মৌসুমে সরকার মাত্র দুই মাসের জন্য সীমিত পরিসরে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়, যা পর্যাপ্ত ছিল না। এতে ১০ শতাংশ ব্যবসায়ীও ব্যবসা করতে পারেননি। পর্যটননির্ভর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ পড়েছেন চরম অর্থসংকটে। এদিকে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় জেলেরা জাল ফেলতে পারছেন না, ফলে সংকট আরও গভীর হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পরিবেশ রক্ষার নামে পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবে দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। তারা দাবি করছেন, প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই বর্ষা মৌসুমে নিজ রূপে ফিরে আসে। তাই সেন্টমার্টিনে ‘পরিবেশ পুনরুদ্ধার’-এর নামে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা নিছক গালগল্প। দ্বীপবাসীর ভাষ্য, সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদের জীবিকাহীন করে এই জনপদকে ধীরে ধীরে জনশূন্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই বিষয়ে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, “বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করেই পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত দ্বীপবাসীকে এক ধরনের দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলেছে।” তিনি জানান, কোস্টগার্ড নিজেরা কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

এদিকে কর্মসংকটের পাশাপাশি দ্বীপবাসীকে ভুগতে হচ্ছে যোগাযোগ সংকটেও। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের নানা বিধিনিষেধ এবং অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে দ্বীপবাসীর জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

সবমিলিয়ে সেন্টমার্টিন এখন আর পর্যটনের হাস্যোজ্জ্বল দ্বীপ নয়, বরং হয়ে উঠেছে বেকারত্ব, অনিশ্চয়তা আর ক্ষোভে ভরা একটি জনপদ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/