নারী উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর জান্নাতুল হক

Reporter Name / ৪৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫


অনেকদিন ধরে নারী উদ্যোক্তা তৈরি কাজে সহায়তা করে আসছেন জান্নাতুল হক। নারীর ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। ২০১৩ সালে একটি ফেসবুক পেজ দিয়ে ‘আমান্দ ফ্যাশন’ নামে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেন তিনি। ফেসবুককেন্দ্রিক এফ–কমার্সের মাধ্যমে শুরু হলেও, দীর্ঘদিন চালানোর পর তিনি ‘শৈলীর ছোঁয়া’ নামে একটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে তিনি এজিউর কুইজিন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর স্বামী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী, যাঁর অনুপ্রেরণায় জান্নাতুল হকের মধ্যে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ থেকেই স্বামীর সহযোগিতায় তিনি ব্যবসায় প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

জান্নাতুল হকের শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে সিরাজগঞ্জে। তিনি উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড সাইকোলজি’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পারিবারিকভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বাবা ও গৃহিণী মায়ের আদর্শে বেড়ে ওঠা জান্নাতুল হক তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোট। বর্তমানে তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন।

ছোটবেলা থেকেই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার বিষয়টি তাঁর কাছে ছিল আবেগের জায়গা। তিনি দেখেছেন, নারী উদ্যোক্তারা সংসার সামলে যখন ব্যবসায় নামেন, তখন নানা সামাজিক বাধা ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেকেই মাঝপথে থেমে যান। এই চিত্র তাঁকে ভাবিয়েছে, তাড়িত করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে তাঁদের মতামত সমাজে গুরুত্ব পাবে এবং তাঁরা প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায়িত হবেন।

এই বিশ্বাস থেকেই জান্নাতুল হক ২০২২ সাল থেকে ১০০–এর বেশি নারী উদ্যোক্তাকে তহবিল ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। কোভিড ও এর পরবর্তী সময়ে এই সহায়তা তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং সামনে এগিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ১০০ নারী উদ্যোক্তাকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাতে তাঁরা নিজেরাই ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন।’

তাঁদের জন্য তিনি শুধু অর্থসহায়তাই দেননি, দিয়েছেন মানসিক সমর্থন, পরামর্শ, বিপণন সহযোগিতা ও নেটওয়ার্কিং সুবিধাও। অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশি মেলাতেও অংশ নিচ্ছেন এবং রপ্তানি বাজারে নিজেদের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জান্নাতুল হক বলেন, তিনি ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কো–ওয়ার্কিং স্পেস গড়ে তুলতে চান, যেখানে একাধিক উদ্যোক্তা একত্রে কাজ করতে পারবেন। থাকবে ছোট ছোট ওয়্যারহাউস, পণ্য সরবরাহ ও ডেলিভারির জন্য যুক্ত প্ল্যাটফর্ম। এতে উদ্যোক্তারা এক জায়গা থেকেই পুরো সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তাঁর বিশ্বাস, এখান থেকেই তাঁরা নিজেদের ব্যবসা বড় করবেন, গড়ে তুলবেন নিজস্ব অফিস ও বড় পরিসরের ওয়্যারহাউস।

ই–কমার্স খাতের উন্নয়নেও জান্নাতুল হক সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান। তিনি উদ্যোক্তাদের জন্য নিরাপদ ব্যবসা পরিবেশ, গ্রাহক আস্থা, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, আধুনিক লজিস্টিক ও পেমেন্ট সিস্টেম, স্টার্টআপ ফান্ড এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বে ই–কমার্স–বান্ধব নীতিমালা তৈরির ওপর জোর দেন। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি জান্নাতুল হকের লক্ষ্য ই–কমার্স খাতকে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখা একটি শক্তিশালী খাতে পরিণত করা। তিনি মনে করেন, এই খাত শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের ভালো সহায়ক হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। সরকারসহ সকলের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করছি।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/