দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে হঠাৎ এক দিনের নোটিশে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো প্রকার আগাম সতর্কতা, নিয়মনীতি কিংবা চুক্তির শর্ত মানা ছাড়াই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ১৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ৩০ জুন থেকে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু পেশাদার ব্যবসায়ী, একই সঙ্গে যাত্রীরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
সূত্রমতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসব প্রতিষ্ঠান ইজারায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। নতুন অর্থবছর ২০২৫-২৬ শুরু হওয়ার আগে তাদের ইজারা নবায়নের কোনো সুযোগ না দিয়েই শেষ দিন (২৯ জুন) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় বেবিচক। অথচ চুক্তি অনুযায়ী, ইজারা বাতিল করতে হলে কমপক্ষে তিন মাস আগে নোটিশ দেওয়ার কথা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিষ্ঠানের সব ইজারা ফি, ভ্যাট, আয়কর ও বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছিল। এরপরও এই সিদ্ধান্তে তারা বিস্মিত। অনেকে অভিযোগ করেছেন, সিভিল এভিয়েশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা—যিনি অতীতে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন—এখন নিজের অতীত ঢাকতেই ‘সাধু’ সাজতে গিয়ে পেশাদার ব্যবসায়ীদের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মকর্তা অতীতে বিমানবন্দরের লাউঞ্জ, বিজ্ঞাপন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসা থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এখন সেই অতীত ধামাচাপা দিতে নিরীহ ব্যবসায়ীদের ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ’ বলে চিহ্নিত করছেন এবং ইজারা বাতিল করছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিমানবন্দরে কিছু প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, মাত্র ৩৯ লাখ টাকা বকেয়া থাকার অজুহাতে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের ইজারা বাতিল হয়েছে: এরোস ট্রেডিং, মেসার্স সজল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মাহবুবা ট্রেডার্স, নাহার কনস্ট্রাকশন, এভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট লি, এ ফাইভ রোডওয়ে লি, ওয়ার্ল্ড ট্রাস্ট ট্যুরিস্ট কার সার্ভিসেস কোং, শিরিন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হাওলাদার অ্যান্ড সন্স, মেসার্স অথৈ এন্টারপ্রাইজ, ওলফ করপোরেশন, আড়িয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন এবং ডিপার্টমেন্ট এস কনসালটিং এর ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক।
এছাড়াও এই তালিকায় আছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্যালকন এজেন্সি এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ফ্যালকন এয়ারপোর্ট সার্ভিস টিম।
এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরে বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছে।
https://slotbet.online/