বদলির ৩ সপ্তাহ পরও বহাল হেলাল

Reporter Name / ২০ Time View
Update : রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫


বদলির অফিস আদেশের প্রায় ৩ সপ্তাহ পার হলেও এখনো অফিসে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে, নিজের বাসাবাড়িকে বানিয়ে নিয়েছেন মিনি অফিস। মধ্যরাতে করছেন দেন-দরবার। অভিযোগ উঠেছে, বদলির আদেশ আসার পর বরং আরও দ্বিগুণ উৎসাহে নিয়মকে অনিয়ম, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে নিয়েছেন ওই ভূমি কর্মকর্তা।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) এস.এম. অনীক চৌধুরী কর্তৃক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ০৫.৪২.২০০০.০০০.০২১.৩১.০০০২.২৩.৪৯৩ নম্বর স্মারকমূলে বদলির আদেশের সতেরো দিন পার হলেও এখনো টেকনাফ সদর ভূমি অফিসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৯ সালে টেকনাফ সদর ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছিলেন মো. হেলাল উদ্দিন। অল্পদিনেই এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি সহজে আয়ত্ত করে নেন সুচতুর এই কর্মকর্তা। তিনি সখ্যতা গড়ে তোলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে নিজের পকেট ভারী করা শুরু করেন।

ধীরে ধীরে, উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সমালোচিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদির ‘মাই ম্যান’ হিসেবে জায়গা করে নেন। ২০১৬ সালে টেকনাফ থেকে বদলি হয়ে যান মো. হেলাল উদ্দিন। কিন্তু, ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ বদলিতে সাবেক সাংসদ বদির মন উতলা হয়ে ওঠে। তাই পুরোনো সখ্যতা জমাতে আবারও ২০২২ সালে টেকনাফ সদর ভূমি অফিসে যোগদানের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন তিনি। এরপর থেকে ফের শুরু হয় ভূমি বাণিজ্য। ভূমি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন এমপি বদির ছত্রছায়ায় ২য় মেয়াদে আবির্ভূত হন কসাই রূপে। টাকা দিলেই মিলত স্বাক্ষর। যদিও ফাইল বৈধ বা অবৈধ—সে বিবেচনা তার কাছে গুরুত্ব পায়নি। এভাবে অনেক অসহায় মানুষ টাকার কাছে হারিয়েছে নিজের বসতভিটা, সহায়-সম্পত্তি!

এতকিছুর পরেও ভুক্তভোগীরা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে চুপ থাকলেও, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলাল উদ্দিনের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরছেন অনেকে। তবে, সুচতুর হেলাল ৫ আগস্টের পর খোলস পাল্টে নতুন বটবৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার আশীর্বাদে হেলাল হয়ে ওঠেন অনেকটা নব্য মাফিয়া। কোনো ভুক্তভোগী ফেসবুকে হেলালের অপকর্ম নিয়ে পোস্ট করলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই পোস্ট গায়েব হয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, ফেসবুকে পোস্ট করলেই মুহূর্তে বিভিন্ন নাম্বার থেকে পোস্ট ডিলিট করার হুমকি আসে। তাই অনেকেই নিরুপায় হয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য হন।

টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী মো. রফিক বলেন, “কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকার পরেও ভূমি কর্মকর্তা হেলাল নানা অজুহাতে ফাইলে স্বাক্ষর করেনি। কিন্তু, পরবর্তীতে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার পরে ফাইলে স্বাক্ষর করেন। তার অফিসে প্রতিদিন ২-৩ বার যাওয়ার পরও তাকে পাওয়া যায় না।”

সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “ভূমি কর্মকর্তা হেলাল নথি গায়েব করার মতো জঘন্য কাজেও লিপ্ত রয়েছে। আমার জমির নথি গায়েব করে ফেলেছিল। তবে, পরবর্তীতে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নথি হাতে পাই।”

এই বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে যদিও, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসানের কাছে বদলির আদেশ হওয়ার পরেও কীভাবে একজন কর্মকর্তা অফিস করেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আরও, একজন কর্মকর্তা আসলেই তিনি বদলিকৃত কর্মস্থলে চলে যাবেন।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/