ছয় মাসে ঢাকাতেই অন্তত ১২১ খুন

Reporter Name / ১৭ Time View
Update : সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫


সারা দেশে অপরাধের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে খুনের ঘটনাও। গেলো ছয় মাসে ঢাকায় খুন হয়েছেন অন্তত ১২১ জন। বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের মতে, এটি নিছক অপরাধ নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির একটি ইঙ্গিত বহন করছে, যার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কোনো কোনো গোষ্ঠী এই সহিংসতা ছড়াচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় পাঁচ যুবক। তারা চাঁদা দাবি করেছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে। এই চক্রের একজন ছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে পরিচিত রিয়াদ। জানা গেছে, এই চক্র ১৭ জুলাই প্রথম দফায় চাঁদার টাকা নিয়েছিল, আর দ্বিতীয় কিস্তি তুলতে এসে ধরা পড়ে।

এই ঘটনা রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চাঁদাবাজ চক্রের দৃষ্টান্তমাত্র। শুধু গত মাসেই ঢাকায় (ডিএমপি এলাকায়) চাঁদাবাজির ঘটনায় ৫৯টি মামলা হয়েছে। আতঙ্কিত নাগরিকদের দাবি, পুলিশ প্রশাসন অনেকক্ষেত্রেই নিষ্ক্রিয়, আর সে সুযোগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সংগঠিত চাঁদাবাজ চক্র।

নগরবাসীর একজন বলেন, “দলীয় পরিচয়, আন্দোলনের পরিচয়, এমনকি শিক্ষার্থী পরিচয়ে অনেকে ভয় দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আর পুলিশ অনেকসময় কিছুই করে না। আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।”

তবে শুধুই চাঁদাবাজি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে খুনের ঘটনাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজধানীতে খুনের সংখ্যা ১২১টি।

আরেকটি উদ্বেগের জায়গা, লুট হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার। জানা গেছে, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে লুট হওয়া প্রায় ১,৮৯৮টি অস্ত্রের মধ্যে এখনো ৬৬০টির কোনো খোঁজ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই এই অস্ত্রগুলো ছিনতাই বা খুনের মতো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোলাবারুদের ব্যবহারের তথ্যও তদন্তকারীদের চিন্তায় ফেলেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “অপরাধ দমন ও অপরাধী ধরতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের কৌশল অনেকাংশে সফল হয়েছে বলেই অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিছক অপরাধের ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝে উঠা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, যদি ছিনতাই-চাঁদাবাজির মতো অপরাধে আতঙ্ক ছড়াতে থাকে, তাহলে সেটি ভোটারদের মনে শঙ্কা তৈরি করবে। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এটিকে রাজনৈতিক ইন্ধন হিসেবে কাজে লাগানোও অসম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এখন দ্রুতই পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শুধু পরিসংখ্যান নয়, জনসচেতনতা ও আগাম প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরে আসে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ছিনতাই-চাঁদাবাজি কিংবা খুন, সবই এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একটি পরিকল্পিত চিত্রের অংশ হতে পারে, যা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তাই সময় থাকতেই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে নাগরিক সমাজে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/