জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠক ও সংলাপের পরও সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার ইস্যুতে কাঙ্ক্ষিত ঐকমত্য তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এবং বিভাজন প্রকট হওয়ায় বহুবার পরিমার্জন করেও এখনো ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ সম্ভব হয়নি। কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়াকে ‘জোর করে ঐকমত্যের চেষ্টা’ বলেও আখ্যা দিয়েছে।
গতকাল রোববার কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি খসড়া জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে এবং সোমবারের (২৮ জুলাই) মধ্যে তা দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। তবে উচ্চকক্ষ, আনুপাতিক পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি নিয়োগের কাঠামোসহ একাধিক মূল বিষয়ে এখনও দ্বিমত রয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বৈঠকে বলেন, মৌলিক ২০টি সংস্কার বিষয়ে ১২টিতে দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। “প্রস্তাবনাগুলো বারবার সংশোধন করেছি, যাতে দলগুলোর সমর্থন পাওয়া যায়,” উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিএনপি সংবিধিবদ্ধ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিষয়ে আলোচনা থেকে ওয়াকআউট করে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য মানে সব প্রস্তাবে একমত হওয়া নয়। আলোচনা তখনই অর্থবহ হয় যখন মতবিনিময় সম্ভব হয়।”
বিএনপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটের পক্ষে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার পক্ষে, কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাঠামো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “উচ্চকক্ষ গঠন হবে ভোটের অনুপাতে, এ বিষয়ে ঐকমত্য না হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর সম্ভব হবে না।” তিনি এটিকে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহির প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আলোচনায় অংশ নিচ্ছি, কারণ সংস্কার চাই। কিন্তু জোর করে ঐকমত্য চাপিয়ে দিলে মানুষ আগের সরকারকেই ভালো মনে করবে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতায় কারা থাকবে তার ওপর নীতির ফারাক থাকবে। তবে গণতন্ত্রের পথে যতদূর ঐকমত্য সম্ভব, ততটুকুই হওয়া উচিত।”
ঐকমত্য কমিশনের এত বৈঠকের পরও মৌলিক কিছু বিষয়ে অনড় অবস্থান, কিছু দলের অংশগ্রহণ সীমিত থাকা, আবার কিছু দলের প্রস্তাবকে গুরুত্ব না দেওয়া; এই পরিস্থিতি প্রশ্ন তুলছে কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও। একপক্ষ বলছে এটি জাতীয় ঐকমত্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, অন্যপক্ষ বলছে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হলে তার স্থায়িত্ব থাকবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদ যতই কাঠামোগত হোক না কেন, সেটি কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন গণভিত্তিক রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং অংশগ্রহণমূলক প্রতিশ্রুতি। এর অভাব থাকলে, এই সনদ কাগুজে দলিলেই রয়ে যাবে।
https://slotbet.online/