রাখাইনে স্বপ্নভঙ্গ, নাফ পেরিয়ে বাংলাদেশে

Reporter Name / ২০ Time View
Update : সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫


স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে ফিরে যাওয়া এক রোহিঙ্গা পরিবার আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মির (এএ) হাতে তারা নির্যাতন, হুমকি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন।

ফিরে আসা পরিবারটির সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ যুবাইর (৪২), তার স্ত্রী নূর আলম তেফুরা (৩৮), দুই পুত্র জাহিদুর রহমান (১৩) ও মোহাম্মদ রোহান (৪), এবং কন্যা রোমিয়া বেগম (৭)। তারা বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান।

ফিরে আসা যুবাইরের চাচাতো ভাই এবং উখিয়ার ক্যাম্প ২৪-এর বাসিন্দা মো. যুবাইর জানান, নয় মাস আগে রাখাইনে আরাকান আর্মির হুমকির কারণে যুবাইরের পরিবার মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। “তাদের একটি ছোট পারিবারিক ব্যবসা ছিল, কিন্তু চাপ ও ভয় বেড়ে যাওয়ায় সেটি বন্ধ করে দিতে হয়,” বলেন তিনি। “তারা ইউএনএইচসিআরের সাথে নিবন্ধিত হয়ে ক্যাম্প ১২-তে বসবাস করছিল, পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষায়।”

২০২৫ সালের জুলাইয়ের শুরুতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ভেবে পরিবারটি রাখাইনে ফিরে যায়। কিন্তু ফিরে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়।

“ফিরে যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের বাড়িতে হানা দেয়,” বলেন চাচাতো ভাই। “যুবাইর তখন বাড়িতে ছিল না। তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের নির্যাতন করে এবং ৫০ লাখ কিয়াত চাঁদা দাবি করে। যদি টাকা না দেওয়া হয়, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার বা হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে সে আবার পুরো পরিবার নিয়ে পালিয়ে আসে।”

আরও একবার বাস্তুচ্যুত

রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রেপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, “হ্যাঁ, আমি এই পরিবারের বিষয়ে শুনেছি। তারা আরাকান আর্মির নির্যাতন ও চাঁদাবাজির শিকার হয়ে ফিরে এসেছে।”

এই ঘটনাটি আবারও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক মহল মাঝে মাঝে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা বললেও, রাখাইনের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।

রোহিঙ্গাদের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে আরাকান আর্মি
রোহিঙ্গাদের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে আরাকান আর্মি

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে যে, ফিরিয়ে দেওয়া রোহিঙ্গারা নির্যাতন, আটক, চাঁদাবাজি এমনকি গুমের ঝুঁকিতে থাকে, বিশেষ করে যেখানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেখানে কোনো আইনি সুরক্ষা বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নেই।

“আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো ঘরে ফেরা সম্ভব,” ক্যাম্পে ফিরে আসার পর স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে বলেছেন যুবাইর। “কিন্তু সেই ঘর আর ঘর নেই। সেটা এখন আরেকটা ফাঁদ মাত্র।”

বর্তমানে পরিবারটি আবারও কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর কাছে পুনরায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তাদের ঘটনা সেই দীর্ঘ তালিকায় নতুন সংযোজন, যারা একবার ফিরে গিয়েও আবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়নের নির্মম বাস্তবতা ও তাদের নিরাপত্তাহীন জীবনের প্রতিচ্ছবি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/