কেন বাংলাদেশিরা ভারতে আসবে?’ – Bangla Affairs

Reporter Name / ১৪ Time View
Update : বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫


বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে সর্বভারতীয় গণমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনাই ঘটে না। কারণ জিডিপিসহ পরিকাঠামোগত দিক থেকে ভারতের তুলনায় অনেকাংশেই ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশিদের এখন ভারতে আসার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।’ মোদি সাহেবের উদ্দেশে তার পরামর্শ, ‘আপনারা (মোদি-অমিত শাহ) এই ভ্রান্ত ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।’

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) একটি লাইভ ভিডিও সামনে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি গণমাধ্যমকে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে এর বিরোধিতা করে মহুয়া বলেন, ‘কোথায় ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশের সমস্যা রয়েছে? কোথায়? কারা ভারতে থাকতে চায়? কারা? আমার সংসদীয় এলাকা হলো বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী। আপনি কি বলতে পারেন, এখন কারা ভারতে থাকতে চায়? বাংলাদেশি?’

এরপর মহুয়া বলেন, ‘আমার সংসদীয় এলাকা নদিয়ার জেলার কৃষ্ণনগর আসন। নদিয়ার অপর প্রান্তে কুষ্টিয়া। সেখানে জিডিপি, স্বাস্থ্য সূচকসহ অনেক কিছুতেই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। দয়া করে নরেন্দ্র মোদিজি এবং অমিত শাহজিকে বলুন, এই ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে যে গোটা পৃথিবীর মানুষ ভারতে আসতে চায় এবং এখানে বসবাস করতে চায়।’

তৃণমূলের এই সাংসদের দাবি, ‘গত তিন বছরে প্রায় ১১ লাখ ভারতীয়, যারা ভারতে থাকতেন এবং ভারত সরকারকে ট্যাক্স দিতেন, তারা এখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। ভারতকে কেউ এখন আর মধু ও ক্রিমের দেশ হিসেবে দেখে না। আর বাংলাদেশিরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করবেন; এটা ভাবাও হাস্যকর। দয়া করে এসব ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আজ বরং ভারত থেকেই অভিবাসীরা অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। তারা দুবাই, পর্তুগাল, ইউরোপীয় দেশগুলোতে সোনালী পাসপোর্টের জন্য ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করছেন।’

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (ফাইল ফটো)
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (ফাইল ফটো)

নারী সঞ্চালক এরপর বলেন, দরিদ্র বাংলাদেশিরা বৈধভাবে অভিবাসন বা গোল্ডেন ভিসার বিপুল অর্থ বহন করতে পারেন না। জবাবে মহুয়া বলেন, ‘এক মিনিট। এক সেকেন্ড। আমি ভারতীয়দের কথা বলছি, যারা এই অর্থ প্রদান করেন। কিন্তু দয়া করে এই ভুল ধারণা ঝেড়ে ফেলুন যে বাংলাদেশিরা ভারতে এসে বসবাস করতে মরিয়া। যদি আপনারা (মোদি সরকার) মনে করেন, সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) এতই মহৎ একটি উদ্যোগ, তাহলে তো সবাইকে আইনি প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ দেবেন। অথচ আজ পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার মানুষও সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করেনি।’

মোদি সরকারের উদ্দেশে মহুয়া বলেন, ‘আপনারা সিএএ চালু করেছেন। বলছেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেবেন। সিএএ এখন আইনে পরিণত হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশি হিন্দুদের কেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে হবে? তারা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন এবং অমিত শাহ তাদের নাগরিকত্ব দেবেন।’

মহুয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তাহলে কারা? কারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? কারা ভারতে আসতে চাইছে? সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ তো আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকারের) অধীনে। কেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেটে আপনি ২ লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই টাকা কোথায় গেল? সীমান্তে নিরাপত্তা কেন জোরদার হচ্ছে না? আরও বিএসএফ মোতায়েন করুন, আরও আলো বসান, আরও প্রযুক্তি আনুন। যদি একজনও অনুপ্রবেশ করে, তাহলে কিভাবে করছে?’

সম্প্রতি ভারতের বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষাভাষীদের ওপর সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে বিজেপির দাবি, তারা অবৈধ বাংলাদেশিদের রুখতেই প্রশাসনিক কড়াকড়ি করছে। এর মধ্যেই তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/