[ad_1]
একজন নারীর ব্যক্তিগত জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘বাড়ির নাম শাহানা’, যা ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের এক নারীর বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি নারীর স্বাধীনতা, বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবন, সামাজিক চোখরাঙানি ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে তৈরি।
ফ্ল্যাশব্যাক কৌশলের মাধ্যমে অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে গল্প বলার মত করে যেভাবে ক্যামেরায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেটা সত্যি চমৎকার।
‘বাড়ির নাম শাহানা’ সিনেমাটির স্ক্রিপ্টিংয়ের মুন্সিয়ানা, কাহিনি, দৃশ্যায়নের ধারাবাহিকতা ও সাবলিল উপস্থাপনা দর্শকদের মানসপটে সত্যি দাগ কেটেছে বলেই মনে হয়। এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র দীপার তালাকের ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, নব্বইয়ের সমকালীন সমাজচিত্র, নারীর ওপর পুরুষতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা, নারীর দ্বিতীয় বিয়ে, মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, সামাজিক নিষ্ঠুরতা, কুসংস্কার, মুক্তমনা নারীর প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই, বংশীয় দাম্ভিকতাসহ সমকালীন অনেক কিছুই উঠে এসেছে।গল্প বা কাহিনিনির্ভর সিনেমা হিসেবে বাড়ির নাম শাহানা’ একটি ব্যাতিক্রমী সিনেমা, যেখানে চরিত্রের চেয়েও গল্প বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
এদিকে বর্তমানে নায়ক বা প্রেমনির্ভর বড় বাজেটের বাণিজ্যিক সিনেমা যেভাবে মার-মার, মার-কাট দেখানো হয়ে থাকে, এই সিনেমাতে তেমন কিছু না থাকলেও এই সিনেমার সবচেয়ে বড় দিক হলো গল্প বলার ধারাবাহিকতা। আকস্মিক কোনো ক্লাইমেক্স না থাকলেও এই সিনেমার মধ্যে একটি আবেদন সব সময়ই চলমান ছিল। স্বল্প বাজেটের এ চলচ্চিত্রটির কাহিনি, কলাকুশলীদের অভিনয় দক্ষতা ও দৃশ্যায়ন আমাদের মনস্তত্ত্বে এমনভাবে আঘাত হেনেছে যে ৩০ বছর আগের কাহিনি একদম জীবন্ত বলেই মনে হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাতা লীসা গাজী। এটি প্রযোজনা করেছে গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড এবং কমলা কালেক্টিভ।
ছবির কেন্দ্রে রয়েছে দীপা নামের এক নারী, যিনি নব্বইয়ের দশকে একটি রক্ষণশীল পরিবারে বড় হন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিয়ে দেওয়া হয় এক প্রবাসী বিপত্নীক ব্যক্তির সঙ্গে, যাকে তিনি চিনতেন না। বিয়ের পর তিনি আবিষ্কার করেন, তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সমাজ ও পরিবার কেড়ে নিয়েছে।
বিয়ে বিচ্ছেদের পর দীপা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজেই নিজের জীবন গড়ে তুলবেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন সংগ্রাম—নিজেকে চিনে নেওয়ার, নিজের পছন্দে জীবন বেছে নেওয়ার। এই যাত্রায় তিনি একদিকে যেমন সামাজিক বাধা মোকাবিলা করেন, তেমনি নিজের আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতার জোরে এগিয়ে যান।
ছবির পরিচালক লীসা গাজী গণমাধ্যমকে জানান, ‘এই গল্পটি শুধু দীপার নয়, এটি আমাদের সমাজের হাজারো নারীর গল্প। আমি চেয়েছি বাস্তবের কাছাকাছি একটা ছবি বানাতে, যেখানে নারীর ভাঙাগড়ার কাহিনি থাকবে—সাহস, কান্না, ভালোবাসা আর বিদ্রোহ একসঙ্গে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছবিটি কোনো নায়ক-নায়িকার গল্প নয়, বরং একজন নারীর চোখ দিয়ে সমাজ, পরিবার এবং নিজের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে তুলে ধরা হয়েছে।’
ছবিটি মুক্তির পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘এতদিন পরে মনে হলো, একটা সিনেমা আমার গল্প বলছে।’
বিশেষ করে নারীরা ছবিটিকে তাদের নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন।
চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন, ‘ছবিটি কোনো অতিনাটকীয়তা ছাড়াই একটি সময় ও একটি বাস্তবতাকে তুলে ধরতে পেরেছে। দৃশ্যপট নির্মাণ, সংলাপ ও অভিনয় ছিল যথাযথ। বিশেষ করে দীপার চরিত্রে অভিনেত্রীর অভিনয় প্রশংসনীয়।’
‘বাড়ির নাম শাহানা’ কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়; এটি এক সামাজিক দলিল। এটি প্রশ্ন তো তোলে—কিন্তু উত্তরও খোঁজে। একটি মেয়ে, একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং সর্বোপরি একটি জাতির নারীর অবস্থান ও পরিবর্তনের একটি সূক্ষ্ম দলিল হয়ে উঠেছে এই কাজ।
[ad_2]
https://slotbet.online/