[ad_1]
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসব দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছে’ এবং গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রভাবিত হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “এই সপ্তাহে ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং অন্যান্য দেশের নেতারা নিঃশর্তভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারা এটি করেছেন ৭ অক্টোবর হামাসের বর্বরতার পর—যা সেদিন প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি জনগণ সমর্থন করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা জানেন, এই সপ্তাহে যারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে কী বার্তা পাঠিয়েছেন? এটা একেবারে স্পষ্ট বার্তা: ইহুদিদের হত্যার মাধ্যমে লাভ হয়।”
তিনি কঠোর ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপের সমালোচনা করেন, যা প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে আরও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “বিশ্বের অনেকেই আর ৭ অক্টোবরের কথা মনে রাখে না। কিন্তু আমরা মনে রেখেছি।” হিব্রু ভাষায় কথা বলতে গিয়ে তিনি গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা তোমাদের ভুলে যাইনি—এক সেকেন্ডের জন্যও নয়।”
নেতানিয়াহুর ভাষণ চলাকালে গাজায় চলমান গণহত্যা এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ইসরায়েলের পুনরাবৃত্ত হামলার প্রতিবাদে অসংখ্য কূটনীতিক ওয়াকআউট করেন। নেতানিয়াহু মঞ্চে উঠতেই বহু প্রতিনিধি দ্রুত হল ত্যাগ করেন। তবে এর মধ্যেই মার্কিন প্রতিনিধিদল নেতানিয়াহুকে করতালি দেয়। নেতানিয়াহু সেই সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ শেষ করা এবং হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি “কাছাকাছি”।
তবে তিনি আশাবাদের পেছনে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেননি। নেতানিয়াহু সেই দিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং সোমবার হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে জিম্মিদের পরিবার ও যুদ্ধক্লান্ত ইসরায়েলি জনগণের চাপ নেতানিয়াহুর ওপর বাড়ছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। একই সঙ্গে তিনি সচেতন, তার ভঙ্গুর জোট সরকারে অতিদক্ষিণপন্থি মন্ত্রীরা নরম কোনো অবস্থান নিলে সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র এবং প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন ধরে রেখেছে। ট্রাম্প জাতিসংঘে বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হামাসকে তাদের “ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য পুরস্কৃত করা”, যা আরও সংঘাত উসকে দিতে পারে।
তবে যত দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিক না কেন, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
নেতানিয়াহুর ভাষণের আগেই তার কার্যালয় জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার সীমান্তে লাউডস্পিকার বসানো হবে, যাতে তার বক্তব্য ফিলিস্তিনিদের শোনানো যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেওয়ায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ভিডিও বার্তায় সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “গণহত্যার যুদ্ধ” বলে আখ্যায়িত করেন, সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রতিশ্রুতি দেন, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসনের দায়িত্ব নিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত। একই সঙ্গে তিনি বলেন, হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং শাসন ব্যবস্থায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
নেতানিয়াহুর কিছু কট্টরপন্থি মন্ত্রী বলছেন, আরও দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারের উচিত পশ্চিম তীরের পুরোটা বা অংশবিশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তার করা, যাতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার আশা চিরতরে শেষ হয়ে যায়।
তবে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হতে দেবেন না। “এটা হবে না,” তিনি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান। জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে বিভিন্ন আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তার কাছে এ বিষয়ে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠকে (যা হবে চলতি বছর জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের চতুর্থ মুখোমুখি সাক্ষাৎ) নতুন ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে বিশ্লেষকেরা বৈঠকটিকে এক ধরনের “কূটনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাবেশ” হিসেবে প্রত্যাশা করেছিলেন।
[ad_2]
https://slotbet.online/